নাম্বার নাইন -আর্শীবাদ নাকি অভিশাপ
পোস্টটি ৯৩৯ বার পঠিত হয়েছেনাম্বার নাইন -আর্শীবাদ নাকি অভিশাপ
"অভিশপ্ত" শব্দটার উচ্চারণে সৃষ্টি করে ভরা কষ্ট, ব্যপ্ত হয় গায়ে কাটা তোলার মত অনুভূতি । অভিশপ্ত শব্দটাকে বিভিন্ন উপায়ে সজ্ঞায়িত করতে পারি। যখন তা আভিধানিক অভিশাপ দেয়া ব্যাক্তিকে তাকে আমরা অভিশপ্ত বলি।
কিন্তু অন্য অর্থে অভিশপ্ত বলতে বোঝায় যা যে জিনিস জুড়ে থাকে শুধু দুঃখ যার আক্রোশটা জুড়ে থাকে জীবনের প্রতিটি ধাপে । আর সে আক্রোশটা যদি হয় ফুটবলের জার্সি নাম্বারে তাহলে ব্যাপারটা আরো ভাবিয়ে তোলে।
ফুটবলে অনেক শোনা যায় এমন অভিশপ্ত কাহিনি যেমন মিলানের নাম্বার নাইন, ম্যান ইউর নাম্বার সেভেন বা চেলসির নাম্বার নাইন। নাইন শব্দটা এতবার যখন এসেছে চলেন নাম্বার নাইন সম্পর্কে জানি কিন্তু কোন দলেরটা?
সম্প্রতি অবামেইয়াং এর ট্রান্সফারটা নিয়ে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে বেশ ট্রান্সফার মার্কেটে চেলসির অভিশপ্ত সেই নাম্বার নাইন জার্সি নিজের গায়ে জড়ানোর কারণে। চলেন পড়ে আসি এই সাধারণ জার্সি নাম্বার কিভাবে হয়ে উঠল "অভিশপ্ত নাম্বার নাইন"
ফুটবল খেলায় প্রতিপক্ষের জালিতে বল ঢুকানো যার একমাত্র কাজ সহজ ভাষায় গোল করার কাজটিই যেন অর্পিত হয় তার উপর আরো সহজ ভাষায় বলতে গেলে স্ট্রাইকারকে বলা হয় নাম্বার নাইন। নিজেদের একান্ত সুপরিচিত নাম্বার যদি না থাকে মোটামুটি সব স্ট্রাইকারের দখলে থাকে এই নাম্বার নাইন জার্সি।
একটা ফুটবলে নাম্বার নাইন পজিশনটা অনেক ক্রিটিকাল কারণ তাদের উপর যেমন খেলার জয়টা নির্ধারিত হয় হারটাও হয় তাদের মিসের পসরার কারণে। আপনার দলে নাম্বার নাইন বা না থাকলে আপনার ট্যাকটিক্স খুব একটা বেশি এফেওক্টিভ হবে বলে মনে হয় না। অর্থাৎ ফলাফল বাহির করা যেখানে হয়ে পড়ে কঠিন। তাই অনেকেই নাম্বার নাইন পজিশনের প্লেয়ার না থাকলেও ফলস নাম্বার নাইনকে খেলায় যাতে খেলার মাঝে গোল বের করার মত প্লেয়ার থাকে। ফুটবল এরিনায় নাম্বার নাইন এর গুরুত্বটা অনেক ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পারছেন।
কিন্তু অনেক দল এই নাম্বার নাইন জার্সিতে রয়েছে বিপদে হাতবদলের পরে হাতবদল ভালো স্ট্রাইকার হয়ে পড়ে যেখানে অসহায়। নিজেকে হারিয়ে ফেলে সেই সবার পরিচতি জার্সিতে। ইতিহাসে লংরানে সেই অভিশপ্ত নাম্বার নাইন জার্সি এর মালিক ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ ক্লাব চেলসি।
৫ বারের ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ জয়ী দলের হাল অনেকটা মাঝি বিহীন নৌকার মত অবস্থা। মাঝে মাঝে সঠিক ডিরেকশনে গেলেও কোচের কারণে, কেনো যেন রেশ কাটে না সেই অভিশপ্ত জার্সির। বর্তমান জেনারেশনের অনেক আগে থেকেই শুরু এই জার্সির অভিশাপ যা চলমান বর্তমান পর্যন্ত। যতজন এই জার্সি পড়েছেন তাদের নিয়ে প্রত্যাশার ভ্যালু নিভে গেছে কয়েকদিন পরে।
"Nobody wants to touch the Number 9"
একটা জার্সি এত অভিশপ্ত যে একটা প্লেয়ার নিজের পজিশনের জার্সি নাম্বারই পড়তে চায় না বলে জানিয়েছেন ব্লু সাবেক কোচ টমাস টুখেল।
১৯৯৩ থেকে ২০২২ পর্যন্ত খেলেছে খেলেছেন মোট ১৬ জন এই জার্সিতে। খালিদ বোলারোজ, ফ্রাংকো ডি স্টেওনো থেকে কোনো গোলের মুখই দেখেনি ক্লাবটি।
ক্রিস সাটন :
লিগ শিরোপা জয়ের চার বছর পর, ব্ল্যাকবার্ন রেলিগেট হওয়ার পরে এবং সাটন ১০ মিলিয়নের বিনিময়ে পাড়ি জমান চেলসিতে। স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে স্ট্রাইকারের সময়টা ছিল খুবই বাজে, মাত্র এক মৌসুম স্থায়ী হয়েছিল এবং পরের গ্রীষ্মে সেল্টিকে চলে যান কিন্তু যাওয়ার আগে চেলসিতে তার অবদান মাত্র একটি গোল।
মার্ক স্টেইন:
গ্লেন হডল নিজের আক্রমণে দুর্ভোগ কমানোর জম্য স্টেইনকে সাইন করান করায়। স্টোক থেকে আসার পরপরই ২৪টি খেলায় ১৪টি গোল করেছিলেন। ১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে কোন গোল ছাড়াই নয়টি ম্যাচ সহ আগের দুই মৌসুমে ২৫ বার বল জালে জড়িয়ে চেলসি ছেড়ে যান।
অ্যান্ড্রি মাইকোলাওভিচ শেভচেঙ্কো :
চেলসিতে সে খেলেছে ২০০৬ -২০০৯ মোট ৩ মৌসুম। গোল করেছেন ২২ টা ৭৭ ম্যাচে। যা তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে রেশিও ছিলো নাম্বার ৯ হিসাবে।
টনি ক্যাসকারিনো :
স্ট্রাইকার হিসাবে ফ্রান্সে দুর্দান্ত সাফল্য দেখালেও
প্রিমিয়ার লিগ যুগের চেলসিতে নিজের দুই মৌসুমে ক্যাসকারিনো ৫১টি খেলায় মাত্র আটবার গোলে বল জড়িয়েছে । আবার এই স্ট্রাইকারই মার্সেইয়ের হয়ে ৮৪টা ম্যাচে ৬১টি গোল করেছেন এবং ন্যান্সিতে তিন মৌসুমে করেছেন ৪৪টি গোল।
মাতেজা কেজম্যান :
পিএসভিতে চার বছরে ১২৯ গোল করার পর, কাঁধে প্রত্যাশার ভার নিয়ে চেলসিতে যোগ দেন। ক্লাবে এক মৌসুমে গোল করেছেন মাত্র ৪ টি তাকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান আমি নিজেও জানি না কি হয়েছে কিন্তু আমি খুশি নিজের ড্রিম ক্লাবে খেলতে পেরে।
হার্নান ক্রেসপো :
ক্রেসপো ক্লাবে তার অভিষেক মৌসুমে ২১ নম্বর শার্টটি পেয়েছিলেন এক বছর পর তাকে নং ৯ দেওয়া হয়েছিল হোসে মরিনহো তাকে রাখতে রাজি করেছিলেন। তার চেলসি চুক্তির মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত দুই বছরের চুক্তিতে ব্লুজের হয়ে ৭৩টি খেলায় তিনি ৩৫টি গোল করেন।
এত খারাপের ভিড়ে একঅটু খানি আলো ছড়াতে আসে ফার্নান্দো টরেস। ওই সময়ের সেরা নাম্বার নাইনের তালিকায় যার নাম ছিলো অন্যতম।
ফার্নান্দো টরেস :
লিভারপুলে ৪ মৌসুমে গোল মেশিন ক্ষ্যাত টরেস গোল করেছে ৮১ টা সেই থেকে চোখে পড়ে যায় চেলসি ক্লাবের নজর তার উপর। ২০১১-১২ মৌসুমে দলে ভেড়ান এই তারকাকে একটু লম্বা সময় কাটালেও এই জার্সিতে নিজের আগের রুপের ঝলক যেন দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন এই তারকা। ১৭২ ম্যাচ খেলে গোল এসেছে ৪৫ টি। সম্পর্ক বিচ্ছেদ ২০১৫ সালেই।
রাডামেল ফেলকাও:
নিজের বাজে ফিটনেস এর জন্য ১৫-১৬ সিজনে ম্যান ইউ থেকে আসা এই তারকা মোটে খেলেছেই ১২ ম্যাচ আর গোল রয়েছে ১টি।
আলবারো মোরোতা :
১৭-১৮ সিজনে এই জার্সির মালিক হোন স্পানিশ এই তারোকা রিয়াল থেকে ৬৬ মিলিয়নে আসেন তিনি কিন্তু আশার আলো অতটুকুন উজ্জীবিত করতে পারে নাই সে।নাম্বার নাইন চেঞ্জ করে ২৯ পড়লেও জার্সির অভিশাপটা কাটিয়ে তুলতে পারে নাই। ৪৮ ম্যাচে গোল করেছে মাত্র ১৫ টা।
গোঞ্জালো হিগুয়েইন :
নাপোলি থেকে আসা এই আর্জেন্টাইন নাম্বার নাইনও ভূগে ছিলেন এই জার্সিতে ১৮-১৯ সিজনে। নাপোলিএ যেখানে ১৪৬ ম্যাচে করেছে ৯১ গোল সেখানে চেলসিতে খেলতে পেরেছেন মাত্র ৬ মাস যাতে ১৮ ম্যাচে গোল মাত্র ৫ টা।
ট্যামি আব্রাহাম :
বেশ কিছু লোন থাকার পরে, চেলসি একাডেমির খেলোয়াড় শেষ পর্যন্ত স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে সুযোগ পান নিজেকে মেলে ধরার এবং গায় জড়ান নাম্বার নাইন জার্সিটা যখন ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ড ২০১৯ সালে ম্যানেজার হন। ৯ নম্বর জার্সিটা র পরা অবস্থায় তিনি ৮২টি উপস্থিতিতে ৪০টি গোল করেন। টুখেলের অধীনে বাইরে পড়ার পর, ৩৪ মিলিয়ন চলে যান জোসে মরিনহোর রোমায়।
রোমেরো লুকাকু :
প্রায় ৯৮ মিলিয়নে ইন্টার থেকে এসেছে চেলসিতে ২০২১ সালে। আশার পরিমাণ অনেক উঁচু থাকলেও ৪৪ ম্যাচ খেলে গোল করেছে মাত্র ১৫ টা। এই জার্সির অন্য হাত বদল করতে তাকে লোনেই ছেড়ে দেয় তার সাবেক ক্লাব ইন্টার মিলানের কাছে।
শেষমেশ এই জার্সির বর্তমান মালিক হলেন গত সিজনে বার্সায় খেলা ফরোয়ার্ড আবামাইয়াং। চেলসির ১৭তম নাম্বার নাইন প্লেয়ার হিসাবে এইবার তার পালা। নিজের ন্যাশনাল টিমে ১৩ বছর ধরে খেলছেন নাম্বার নাইন জার্সিতে ক্লাবে ভিন্ন জার্সি নাম্বারে খেললেও নাম্বার নাইনে এই প্রথম তাও সেই নামে "অভিশপ্ত" জার্সির।
কাটবে কি সেই অভিশাপ। চেলসির নাম্বার নাইন কি ফিরবে তার হাত ধরে নাকি অপেক্ষা করতে হবে আরো কয়েক সিজন, তালিকাটা বেড়ে হবে ২ দশক এর ঘরে।
সময় শুধু এখন অপেক্ষার, নাম্বার নাইন কে আশীর্বাদ করে গড়ে তোলার।
- 0 মন্তব্য