Vitor Roque- ব্রাজিল ফুটবলের পরবর্তী বিস্ময়বালক?
পোস্টটি ১৩৯৪ বার পঠিত হয়েছেগত দশকের নেইমার থেকে এই দশকের ভিনিসিয়াস অথবা আর্সেনালে আলো ছড়ানো গেব্রিয়েল হেসুস থেকে ইউনাইটেড এর রেকর্ড ১০০ মিলিয়ন সাইনিং এন্টোনি- ব্রাজিল ফুটবল যেনো একের পর এক ট্যালেন্টেড এট্যাকার দ্বারা আশীর্বাদপুষ্ট। ইউরোপের টপ ফাইভ লীগের শীর্ষ ক্লাবগুলোতে সফল ব্রাজিলিয়ান এট্যাকার এর সংখ্যা এতো বেশি যে কাকে রেখে কাকে দলে ডাকবেন, সে ভাবনাতেই হয়তো অনেক রাত্রি নিদ্রাহীন কাটাতে হয় ব্রাজিল বস তিতে কে। বর্তমানে অসংখ্য কোয়ালিটি ফরোয়ার্ড আছেই ব্রাজিল দলে, তার চেয়েও বেশি শক্ত ব্রাজিলের ফরোয়ার্ড বেরিয়ে আসার পাইপলাইন। ব্রাজিল লীগে ১৫-২০ বছর বয়সী আলো ছড়ানো সম্ভাবনাময় ফরোয়ার্ড সংখ্যা অনেক। তাদের মধ্যে যারা আগামীতে ফুটবলের বিস্ময় বালক হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ রাখেন, তাদের একজন হলেন Vitor Roque।
কথায় আছে, একটি দিনের শুরু দেখেই নাকি দিনটি কেমন তা বলে দেয়া যায়। ১৬/১৭- এই বয়সটা সাধারণত একজন ফুটবলারের প্রফেশনাল ক্যারিয়ারের শুরুর সময়। এই বয়সের কাউকে যদি কোনো ক্লাব রেকর্ড ফি দিয়ে সাইন করায়, তাহলে বুঝতে হবে সে স্পেশাল কেউ। ভবিষ্যতে বড় মাপের ফুটবলার হওয়ার সম্ভাবনা তার মধ্যে আছে। ব্রাজিলের তিমোতেও এ জন্ম নেয়া ভিতোর ইয়ুথ ক্যারিয়ার শুরু করেন আমেরিকা মিনেইরোতে। মাত্র ১০ বছর বয়সে মিনেইরোর ইয়ুথ সেটআপ এ যোগ দিয়ে ধাপে ধাপে মুগ্ধ করেন কোচদের। মুগ্ধ হয় অন্য দলের স্কাউটরাও। ফলে ১৯ সালে তাকে এপ্রোচ করে ইয়ুথ টিমে ভেড়ায় ক্রুইজেরো। ক্রুইজেরোর হয়েই ২০২১ সালে সিনিয়র ফুটবলে অভিষেক ঘটান ভিতোর।
অভিষেকের পর থেকেই ম্যানেজারের মন জয় করেন ভিতোর, ফলে গেম টাইমও মিলছিল রেগুলার। গেম টাইম পেয়ে হতাশ করলেন না কোচিং স্টাফকে। ক্রুইজেরোর হয়ে ১৬ ম্যাচ খেলে করলেন ৬ গোল। সিনিয়র ফুটবলে ডেব্যুর পর থেকেই তার খেলা নজরে পড়েছিল অন্যান্য ক্লাব এর স্কাউটদের৷
তার দিকে স্কাউটদের বিশেষ নজর যাওয়ার কারণ ছিল অনেক। সিনিয়র ফুটবলে একদম নতুন হলেও বয়সের তুলনায় তার ফিজিক্যালিটি ছিল অনেক স্ট্রং। বক্সের ভেতরে তার মুভমেন্ট যতোটা চতুর, বক্সের বাইরেও এট্যাক এর সময় লিংক আপ প্লের জন্য তার মুভমেন্টের পরিপক্কতা ততোটুকুই। এসব এবিলিটির সাথে তার ন্যাচারাল পেস Icing on the cake। তরুণ প্লেয়ারদের স্কাউট করার ক্ষেত্রে গোল এসিস্ট এর চাইতে এসব এট্রিবিউটগুলো বেশি দেখেন, এসবে এ+ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার মতো একজন ভিতোর। অনেক ব্রাজিলিয়ান ক্লাবই তাকে স্কাউট করেছে, তবে সবাইকে ছাড়িয়ে তাকে দলে নেয়ার রেস জিতে যায় এথলেটিকো পারানেনসে। পারানেনসে তার পুরো রিলিজ ক্লজ পরিশোধ করেই দলে নিয়েছে। যে মূল্যের পরিমাণ ২৪ মিলিয়ন ব্রাজিলিয়ান ডলার, যা তাকে বানিয়েছে এথলেটিক পারানেনসে ক্লাবের রেকর্ড সাইনিং।
এথলেটিক পারানেনসের হয়ে এখন পর্যন্ত স্ট্যাটিকালি অথবা পারফরম্যান্স ওয়াইজ দুইদিক দিয়েই উজ্জ্বল ভিতোর। পারানেনসে এর হয়ে এখন পর্যন্ত ভিতোর ২৬ ম্যাচ খেলেছেন, করেছেন ৬ গোল এবং ২ এসিস্ট। গোল- এসিস্টের চাইতেও বড় বিষয় হলো প্রতি ম্যাচে তার মধ্যে দেখা যাচ্ছে ইম্প্রুভমেন্টের ছাপ। ম্যাচ বাই ম্যাচ সে নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। নিজের দূর্বলতার জায়গাগুলোকে পয়েন্ট আউট করে তা ইম্প্রুভ করে কাটিয়ে যাচ্ছে। নিজের স্ট্রং জোনগুলোকে আরো পলিশ করছে।
এবার তার খেলার বিভিন্ন গুণ নিয়ে আলোচনা করবো:
Style of play:
ভিতোর দুই পায়েই সমান পারদর্শী। তার খেলার স্টাইল বর্তমান ফুটবলের ফ্লুইড নাম্বার নাইনের মতো, যে শুধুমাত্র বলের জন্য বক্সে অপেক্ষা করবে না বরং বিল্ড আপেও অংশ নিবে। সিমিলার টু হ্যারি কেইন। বর্তমানে পারানেনসের ৪-২-৩-১ ফরমেশনে সে নাম্বার নাইন হিসেবে খেললেও হিটম্যাপ এটাই দেখাচ্ছে সে রাইট সাইডে ড্রিফট করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।
Movement:
বয়স মাত্র ১৭ হলেও ভিতোর এর অফ দ্যা বল মুভমেন্ট সেন্স অনেক বেশি স্ট্রং। তার খেলার বিভিন্ন মোমেন্ট লক্ষ্য করলেই সেটা বোঝা যায়। নাম্বার নাইন হিসেবে খেলা শুরু করলেও সময়ে তাকে ডিপে ড্রপ করতে দেখা যায় লিংক আপ/পজিশনাল প্লের জন্য। ফাইনাল থার্ডেও তার লিংক আপ মুভমেন্ট বেশ ম্যাচিউর। তার পেস এর কারণে দল কাউন্টার এট্যাকের সময়ে তার মুভমেন্টের শতভাগ ফায়দা পায়।
Physique:
১৭২ সে.মি. অথবা ৫ ফুট সাড়ে ৭ ইঞ্চি হাইট ধারী ভিতোর এর লোয়ার বডি অনেক স্ট্রং। যার ফলে বিল্ড আপে সে বল হোল্ড করলে তার কাছ থেকে বল নেয়া বেশ কঠিন। এখনো সে এরিয়ালি দূর্বল। অবশ্য এই এরিয়া বয়সের সাথে সাথে উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
Technique and Dribbling:
সিনিয়র ফুটবলে অন্যদের সাথে তুলনা করলে তাকে Insane ড্রিবলার বলা যাবে না, তবে তার বয়স অনুযায়ী তার ড্রিবলিং কোয়ালিটি অনেক বেশি হাই। ওর হাইট এক্ষেত্রে একটা এডভান্টেজ। নিজের বডি ব্যালেন্স আর লো সেন্টার অফ গ্রাভিটি দিয়ে সে ডিরেকশন চেঞ্জ করতে পছন্দ করে যা তাকে হয় ডুয়েল জেতায়, অথবা তাকে আটকানোর জন্য অপোনেন্ট এর ফাউল করা লাগে। ড্রিবলিং অনেক হাই কোয়ালিটির হলেও তার টেকনিক নিয়ে বেশ কাজ করতে হবে। বল ক্যারি করার সময় বল কন্ট্রোলিং এ সে অনেক বেশি ভালো, কিন্তু তার ফার্স্ট টাচ এবং টাইট পজিশনে পাসিং, দুইটাই এখনো এভারেজ। অনেক সময় তার এভারেজ ফার্স্ট টাচ এর কারণে সে বল হারায়।
Finishing:
সে দুই পায়েই সমান পারদর্শী, তবে শট নেয়ার ক্ষেত্রে তার প্রেফারড ফুট ডান পা। এই সিজনে মাত্র ৮.৫% বার সে বাম পা দিয়ে শট নিয়েছে, বোঝাই যাচ্ছে শট এক্ষেত্রে ডান পা এর উপর তার নির্ভরতা। তার শট পাওয়ার দূর্দান্ত, এজন্য লং রেঞ্জ থেকে শট নিতেও সে দ্বিধাবোধ করে না।
Decision Making:
ভিতোর এর বয়স মাত্র ১৭, প্রফেশনাল ফুটবলে এটি তার প্রথম ফুল সিজন। এই দিকটা বিবেচনা করলে তার ডিসিশন মেকিং নিয়ে অভিযোগ করা উচিৎ না। তরুণ ফুটবলারের ম্যাচিউর ফুটবলার হওয়ার পথে ডিসিশন মেকিং এ পরিপক্ক হওয়ার ধাপটা পেরোতে হয়। ব্যতিক্রম নন ভিতোরও। তার খেলার এট্রিবিউটগুলোর মধ্যে এটি নিয়েই সবচেয়ে বেশি কাজ করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে বল রিলিজ করার সময় আরেকটু কম সময় নিতে হবে এবং সবসময় ড্রিবলিং করার এটেম্পট নেয়া যাবে না যা তরুণ ফরোয়ার্ডদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা।
Summary:
নিজের বয়স এর পর্যায়ে ভিতোর অনেক ভালো একজন ফুটবলার। ইতিমধ্যে দি গার্জিয়ান পত্রিকার "দি নেক্সট জেনারেশন" খ্যাত ৬০ জন তরুণ সম্ভাবনাময় ফুটবলারের তালিকায় তার নাম চলে এসেছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু ইউরোপিয়ান টপ ক্লাব তাকে স্কাউট করেছে, যার মধ্যে বার্সেলোনা, জুভেন্টাসের মতো ক্লাবের নাম আছে। আশা করা যাচ্ছে খুব শীঘ্রই ইউরোপের বড় কোনো ক্লাব তার নেক্সট স্টেপ হবে এবং এই স্টেপই তার ক্যারিয়ারের বাকি পথ অনেকটাই ঠিক করে দিবে। ব্রাজিল থেকে প্রতি বছরই অসংখ্য এক্সাইটিং ইম্প্রেসিভ ট্যালেন্ট বের হয়। তাদের মধ্যে অনেকেই হারিয়ে যায়, অনেকে নিজের ট্যালেন্টের সাথে হার্ড ওয়ার্ক এর সম্মিলন ঘটিয়ে ভিনিসিয়াসদের মতো নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে। ভিতোর এর ক্যারিয়ার সবে মাত্র শুরু, সে ন্যাচারাল প্রতিভার অধিকারী। তার সামনে সুযোগ আছে নেক্সট ভিনিসিয়াস অথবা নেইমার হওয়ার অথবা তাদেরকেও ছাড়িয়ে যাওয়ার। আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই ওয়ান্ডার কিড অথবা বিস্ময় বালক হিসেবে তার নাম শোনা গেলে মোটেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না, সেই যোগ্যতা তার পুরোপুরি আছে।
- 0 মন্তব্য