এশিয়ায় বিশ্বকাপ ও দক্ষিণ কোরিয়ার স্বপ্নযাত্রা
পোস্টটি ৯৮০ বার পঠিত হয়েছেফুটবলে বরাবরই এশিয়া বেশ পিছিয়ে। বিশ্ব ফুটবলে সবসময়ই রাজত্ব করে এসেছে ইউরোপীয় ও লাতিনরা। আর তাদের মতো রাজত্ব না করলেও মোটামুটি সবসময়ই বেশ ভালোমতো প্রতিযোগিতা করে আসছে আফ্রিকান দেশগুলোও। কিন্তু সেখানে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মহাদেশটির অবস্থান একদম নগণ্য। প্রায় কখনই কোনো এশিয়ান দেশ ফুটবল বা ফুটবল বিশ্বকাপে সেভাবে নজর কাড়তে পারেনি।
তবে এর মাঝে হাতে গোণা ক'টি দেশ সবসময়ই চেষ্টা করেছে নিজেদের বিশ্বের সামনে উজ্জ্বল ভাবে তুলে ধরতে, ফুটবল বিশ্বে নিজেদের মর্যাদা সমুন্নত করতে। আর এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে সফল যে দেশ, সেটি হলো দক্ষিণ কোরিয়া।
২০০২ সাল। এ বিশ্বকাপ টা ছিলো অন্যগুলোর তুলনায় বেশকিছু দিক থেকেই একটু বিশেষ। সেবার প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর বসে ইউরোপ ও আমেরিকার বাইরে, এশিয়ার বুকে। শুধু তাই নয়, প্রথমবারের মতো সেবার বিশ্বকাপের আয়োজন করে একাধিক দেশ। পূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান একত্রে সেবার বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজন করে।
৩১ মে, ২০০২। দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের ওয়ার্ল্ড কাপ স্টেডিয়ামে ফ্রান্স বনাম সেনেগালের ম্যাচ দিয়ে শুরু হয় সেবারের বিশ্বকাপ। প্রথম ম্যাচেই ঘটে এক বিরাট অঘটন। ইঞ্জুর্ড জিদানকে ছাড়া খেলতে নামা ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স হেরে বসে সেবারই প্রথমবারের মতো খেলতে আসা সেনেগালের সাথে। পাপা বুবা দিওপের একমাত্র গোলে শক্তিশালী ফ্রান্স কে হারিয়ে দেয় আফ্রিকান দলটি।
এরপর আরও অসংখ্য অঘটন দেখেছে সেবারের বিশ্বকাপ। ফ্রান্স সেবার ফুটবল ইতিহাসের প্রথম দল হিসেবে বিশ্বকাপ জয়ের পরের আসরেই গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয়, পরবর্তীতে যেটার পুনরাবৃত্তি করে ইতালি, স্পেইন ও জার্মানি। সেইসাথে টুর্নামেন্টে কোনো গোলই করতে পারেনি ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা।
এর পরের অঘটনের শিকার হয় সেবারের বিশ্বকাপের অন্যতম টপ কন্টেন্ডার আর্জেন্টিনা। গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা, জাভিয়ের জানেত্তি, গ্যাব্রিয়েল ভেরনদের সে দল অন্যতম ফেভারিট হিসেবেই এসেছিলো বিশ্বকাপে। কিন্তু ইংল্যান্ডের সাথে হারার পর সুইডেনের সাথে ড্র করে গ্রুপ পর্ব থেকেই ছিটকে পড়ে তারা।
তবে টপ ফেভারিটদের এই অঘটনের ভীড়ে সবাইকে চমকে দিয়ে সেবার বেশ ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছিলো এশিয়ার পরাশক্তি স্বাগতিক দক্ষিণ কোরিয়া। নিজেদের প্রথম ম্যাচে পোল্যান্ড কে ২-০ গোলে পরাজিত করার মাধ্যমে টুর্নামেন্টে শুভ সূচনা করে তারা৷ পরের ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ড্র করে ১-১ গোলে।
তবে তাদের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা ছিলো গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে। সে ম্যাচে তাদের মুখোমুখি হয় লুইস ফিগো, পাউলেতা, বাইয়াদের পরাক্রমশালী পর্তুগাল। সে ম্যাচে পরিষ্কার ফেভারিট ছিলো পর্তুগিজরা৷ তবে ২৭ মিনিটের মাথায় লাল কার্ড দেখেন পর্তুগাল মিডফিল্ডার জোয়াও পিন্টো। আর এতেই দুর্বল হয়ে পড়ে ফিগোর দল। কিন্তু তারপরও দশ জনের দল নিয়ে একের পর এক আক্রমণ পাল্টা আক্রমণ করে যাচ্ছিলো। কিন্তু তাদের ওপর খাড়ার ঘা নেমে আসে ৬৬ মিনিটে। দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন সেন্টার-ব্যাক বেতো। এরপর আর কোরিয়ানদের রুখতে পারেনি পর্তুগাল। ৭০ মিনিটের মাথায় পার্ক জি সাং এর গোলে ১-০ গোলে জয় পায় স্বাগতিকরা।
গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে রাউন্ড অব সিক্সটিনে কোয়ালিফাই করে দক্ষিণ কোরিয়া। সেখানে তারা প্রতিপক্ষ হিসেবে পায় বিশ্বকাপের অন্যতম শিরোপা প্রত্যাশী তারকায় ভরপুর শক্তিশালী ইতালিকে। বুফন, মালদিনি, টট্টি, ভিয়েইরি, ডেল পিয়েরোদের সে ইতালি দল নামে ভারে ছিলো বেশ এগিয়ে।
ম্যাচের শুরুতেই বিতর্কিত এক পেনাল্টি পায় দক্ষিণ কোরিয়া। কিন্তু আহন জান হোয়াং এর সে শট দারুণভাবে রুখে দেন জিয়ানলুইজি বুফন। ম্যাচের মাত্র ১৮ মিনিটেই ভিয়েইরির গোলে এগিয়ে যায় আজ্জুরিরা। এরপর আর গোলের দেখা পাচ্ছিলোনা কোনো দলই। ইতালির ইস্পাত কঠিন ডিফেন্স রুখে দিচ্ছিলো কোরিয়ানদের সব আক্রমণ। ম্যাচ যখন প্রায় শেষ, সবাই ইতালি কে বিজয়ী ধরেই নিয়েছে, এমন একটা মূহুর্তে ম্যাচের ৮৮ মিনিটের মাথায় গোল করে বসেন দক্ষিণ কোরিয়ার লেফট উইঙ্গার সিউল কি হিউন। ফলাফল, ১-১ সমতায় শেষ হয় ম্যাচ। খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
অতিরিক্ত সময়েও লড়াই চলছিলো সমানে সমানে। ১০৩ মিনিটে হঠাৎ লাল কার্ড দেখেন ম্যাচের অন্যতম সেরা পারফর্মার ফ্রান্সেসকো টট্টি। কিন্তু এরপরও ভেঙে পড়েনি ইতালি। অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে গোল্ডেন গোল করে ইতালি কে এগিয়ে দেন দামিয়ানো টমাসি। কিন্তু বিতর্কিতভাবে অফসাইডে সে গোল বাতিল করেন রেফারি বায়রন মোরেনো। সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছিলো পেনাল্টি শুট আউটের। ঠিক এই মূহুর্তে মাত্র তিন মিনিট বাকি থাকতে আবার দক্ষিণ কোরিয়ার চমক। শুরুতে পেনাল্টি মিস করা আহন জান হোয়াং এর অসাধারণ এক হেডার জড়িয়ে যায় জালে। সেই সাথে ইতালিকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে যায় দক্ষিণ কোরিয়া।
কোয়ার্টার ফাইনালে ক্যাসিয়াস, হিয়েরো, পুয়োল, মরিয়েন্তেসদের স্পেইনের মুখোমুখি হয় স্পেন। গোলশূন্য তে শেষ হয় প্রথমার্ধ। দ্বিতীয়ার্ধের হেডার থেকে গোল করেন স্প্যানিশ মিডফিল্ডার রুবেন বারাজা, কিন্তু গোল বাতিল করে ফাউলের বাঁশি বাজান রেফারি জামাল আল ঘান্দুর। গোলশূন্য ড্র এ শেষ হয় ম্যাচ। খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধে গোল করেন স্প্যানিশ স্ট্রাইকার মরিয়েন্তেস। কিন্তু বিতর্কিতভাবে বাতিল হয় সে গোল। এরপর মরিয়েন্তেসের আরেক শট পোস্টে লেগে ফিরে আসে।
অতিরিক্ত সময়ও শেষ হয় গোলশূন্য ড্র তে। খেলা গড়ায় পেনাল্টি শুট আউটে৷ সেখানে দক্ষিণ কোরিয়ার গোলরক্ষক লি উন জায় স্প্যানিশ মিডফিল্ডার জোয়াকুইনের শট রুখে দেন। অন্যদিকে নিজেদের সবকটি স্পটকিকেই গোল করে কোরিয়ানরা। ফলাফল, পেনাল্টি শুট আউটে ৫-৩ গোলে জয়লাভ করে সেমিফাইনালে পৌঁছে যায় দক্ষিণ কোরিয়া।
সেমিফাইনালে দক্ষিণ কোরিয়ার মুখোমুখি হয় সেবারের বিশ্বকাপের অন্যতম চমক জার্মানি। আরও ভালো করে বললে, অতিমানব অলিভার কান। জার্মানির সেবারের দলটি তেমন তারকাসমৃদ্ধ ছিলোনা। আন্ডারডগ হিসেবেই বিশ্বকাপ খেলতে আসে তারা৷ কিন্তু সে দলে ছিলো অলিভার কান নামের এক অতিমানব। জার্মান গোলকিপার যেন একা হাতে টানছিলেন পুরো দল কে। আর তাঁর সাথে ছিলেন অধিনায়ক মাইকেল বালাক। তাদের অসাধারণ নৈপুণ্যে সেমিফাইনালে পৌঁছে গিয়েছিলো জার্মানি।
সেমিফাইনালেও অলিভার কান ও মাইকেল বালাক ছিলেন সাবলিল ও অসাধারণ। বহুবার আক্রমণ করেও কানের ইস্পাতদৃঢ় দেয়াল ভেদ করতে ব্যর্থ হয় দক্ষিণ কোরিয়া। কান শুরু থেকেই নিজের কাজ করছিলেন যথার্থভাবে। অতঃপর ৭৫ মিনিটের মাথায় চমক দেখালেন বালাক। তার প্রথম শট কোরিয়ান গোলকিপার রুখে দিলেও ফিরতি শট আর আটকাতে পারেনি। এগিয়ে যায় জার্মানি। বাকি সময়টায় একের পর এক চেষ্টা চালাতে থাকে দক্ষিণ কোরিয়া। কিন্তু কান কে পরাস্ত করতে তারা সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়। সেই সাথে বিশ্বকাপে দক্ষিণ কোরিয়ার অবিশ্বাস্য সে যাত্রার সমাপ্তি ঘটে। ফাইনালে পৌঁছে যায় জার্মানি।
সেমিফাইনালের আরেক ম্যাচে সে বিশ্বকাপের আরেক চমক তুরস্কের মুখোমুখি হয় রোনালদো, রিভালদো, কাফু, রবার্তোর কার্লোসদের মহাশক্তিধর ব্রাজিল। সে ম্যাচটাও ছিলো টানটান উত্তেজনাকর। সেলেসাওদের সাথে বেশ ভালো লড়াই করে হাকান সুকুরের তুরস্ক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর পরাক্রমশালী ব্রাজিল দলের সাথে পেরে ওঠেনি। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই দারুণ এক গোল করে ব্রাজিল কে এগিয়ে দেন কিংবদন্তি স্ট্রাইকার রোনালদো নাজারিও। এরপর অনেক চেষ্টা করেও আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি তুর্কীরা৷ ১-০ গোলের জয় নিয়ে ফাইনালে পা রাখে ব্রাজিল।
২৯ জুন তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে মুখোমুখি হয় সে বিশ্বকাপের দুই চমক স্বাগতিক দক্ষিণ কোরিয়া ও তুরস্ক। এ ম্যাচটিও ছিলো বেশ জমজমাট। ম্যাচের প্রথম মিনিটেই গোল করেন হাকান সুকুর। এগিয়ে যায় তুর্কীরা। আচমকা গোল খাওয়ার পর মরিয়া হয়ে ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করতে শুরু করে দক্ষিণ কোরিয়া। ফলাফল পেতে দেরি হয়নি। নয় মিনিটেই স্বাগতিকদের সমতায় ফেরান মিডফিল্ডার লি ইউল ইয়ং।
কিন্তু এ সমতা স্থায়ী হয়নি মোটেও। লির গোলের মাত্র চার মিনিট যেতেই আবার এগিয়ে যায় তুরস্ক। এবার স্কোরার ইলহান মানসিজ। দ্বিতীয় গোল দেওয়ার পর ডিফেন্স সামলে বেশ গোছানো ভাবে খেলতে শুরু করে তুরস্ক। ওদিকে পিছিয়ে পড়ে মরিয়া হয়ে আক্রমণ চালাচ্ছিলো দক্ষিণ কোরিয়া। কিন্তু এতে কাজের কাজ তো কিছু হয়-ই নি, বরং উল্টো ৩২ মিনিটের মাথায় কাউন্টার থেকে আবার গোল করেন ইলহান। ৩-১ গোলে এগিয়ে যায় তুরস্ক। এরপর বাকি সমটায় আর গোলের দেখা পাচ্ছিলোনা কোনো দল। একদম শেষ মূহুর্তে এসে ইঞ্জুরি টাইমে দক্ষিণ কোরিয়ার হয়ে গোল করেন সং চং গাগ৷ তবে তাঁর এ গোল শুধু ব্যবধানই কমিয়েছে। ৩-২ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে তুরস্ক।
অবশেষে ঘনিয়ে আসে ৩০ জুন। সেদিন জাপানের ইয়োকোহামা শহরের ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়াম ইয়োকোহামায় অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বকাপ ফাইনাল। প্রায় সত্তর হাজার জনসমুদ্রের মাঝে সেদিন মুখোমুখি হয় বিশ্বকাপের মঞ্চে সফলতম দুই দল ব্রাজিল ও জার্মানি। তবে এই আসরে নামে ভারে ব্রাজিল ছিলো বেশ এগিয়ে।
জার্মানি দলে বড় নাম ছিলোনা তেমন। গোলকিপার অলিভার কান ও অধিনায়ক মাইকেল বালাকের অসাধারণ পারফর্মেন্সে ভর করে ফাইনাল পর্যন্ত এসেছিলো জার্মানি। কিন্তু ফাইনালে দলের সবচেয়ে বড় ভরসা অধিনায়ক মাইকেল বালাককেই মিস করে জার্মানি। আগের ম্যাচগুলোয় তিনটি হলুদ কার্ড দেখায় ফাইনালে সাসপেন্ডেড হন বালাক।
অন্যদিকে ব্রাজিল ছিলো আগাগোড়া তারকা মহাতারকায় সমৃদ্ধ। দলের ফ্রন্টলাইনে ছিলো তিন কিংবদন্তী রোনালদো, রিভালদো ও রোনালদিনহো। ডিফেন্সের দুই দিকে ছিলো তর্কসাপেক্ষে ফুটবল ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম ফুলব্যাক যুগল কাফু ও রবার্তো কার্লোস। অভারঅল, ব্রাজিলের সে টিম ছিলো ফুটবল ইতিহাসেই অন্যতম সেরা টিম।
বেশ হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলতে শুরু করে ম্যাচের শুরু থেকেই। পনের মিনিটের দিকে ছোট এক সুযোগ পায় জার্মানি। বার্ন্ড স্নেইডার বক্সে দাঁড়ানো মিরোস্লাভ ক্লোসা কে দারুণ এক ক্রস দেন। কিন্তু ব্রাজিল সেন্টার ব্যাক এভানিলসন সুন্দরভাবে সেটা ক্লেয়ার করে দেন। এর তিন মিনিট পর ব্রাজিল ভালো একটি সুযোগ পায়। রোনালদিনহো অসাধারণ এক পাস দেন রোনালদোকে, কিন্তু কানের সাথে ওয়ান অন ওয়ানে সে শটে বেশ বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যায়। ত্রিশ মিনিটের মাথায় আবার রোনালদিনহো কি পাস দেন রোনালদোকে, কিন্তু রোনালদোর দুর্বল শট রুখে দেন কান। এরপর ক্লেবারসন দুটি সুযোগ পান৷ কিন্তু প্রথমটি বাইরে দিয়ে মারার পর দ্বিতীয়টি রুখে দেয় বারপোস্ট। হাফ টাইমের আগে রোনালদোর আরেকটি শট রুখে দেন কান।
দ্বিতীয়ার্ধে শুরুতে জার্মান মিডফিল্ডার জেরেমিসের হেডার আটকে দেন এভানিলসন। নুভিলের দারুণ এক ফ্রি কিক রুখে দেন সেলেসাও গোলরক্ষক মার্কোস। এরপর রোনালদোর আরেক অসাধারণ শট আটকে দেন কান। এছাড়া গিলবার্তো সিলভার দারুণ হেডারও সেভ করেন অলিভার কান।
অতঃপর ৬৭ মিনিটে জার্মান মিডফিল্ডার হামানের পা থেকে বল নেন রোনালদো। তারপর সেটি পাস করেন রিভালদোকে। রিভালদোর শট কান রুখে দিলেও ঠিকমতো ক্লিয়ার করতে পারেননি। ফলাফল, ফিরতি শটে বল জালে জড়িয়ে দেন রোনালদো। এগিয়ে যায় ব্রাজিল।
দ্বিতীয় গোলটিও আসে রোনালদো রিভালদোর মিলিত প্রচেষ্টা থেকে। ক্লেবারসন বক্সের সামনে রিভালদোকে পাস দেন, রিভালদো সেটা বাড়িয়ে দেন রোনালদোর দিকে। ক্লেয়ার করতে আসা আসামোয়াহ কে সুন্দরভাবে পাশ কাটিয়ে একপাশ দিয়ে বল জালে ঢুকিয়ে দেন রোনালদো। ২-০ গোলে এগিয়ে যায় ব্রাজিল।
বাকি সময়ে জার্মানি আরও দুটি শট নেয়। ৮৩ মিনিটে শট নেন অলিভার বায়ারহফ ও স্টপেজ টাইমে আরেকটি শন নেন ক্রিশ্চিয়ান জিয়েজ। কিন্তু উভয় শটই আটকে দেন মার্কোস। অবশেষে শেষ বাঁশি বাজান রেফারি পিয়েরলুইজি কলিনা। ২-০ গোলে জয় পায় ব্রাজিল।
আরও একবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় ব্রাজিল। ফুটবল ইতিহাসে একমাত্র দল হিসেবে পাঁচবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে, যে রেকর্ড এখনো অক্ষুণ্ণ। রোনালদো রিভালদো রোনালদিনহোর জাদুকরী মুহূর্তগুলো আরও একবার ব্রাজিলকে বসায় বিশ্বসেরার আসনে।
শেষ হয় বিশ্বকাপ ফুটবল ২০০২, এশিয়ার বুকে প্রথম বিশ্বকাপ। কিন্তু কথায় বলে, কোনোকিছুই একদম পার্ফেক্ট কখনো হয়না। এ বিশ্বকাপেও বিতর্ক তৈরি হয়েছিলো বেশকিছু, বিশেষভাবে স্বাগতিক দেশের ম্যাচগুলোয় রেফারিং নিয়ে বড় রকমের বিতর্ক তৈরি হয়। অনেকেই অভিযোগ করেন, ফিফা কমার্শিয়াল সাফল্যের জন্য বেশি স্বাগতিক দর্শক পাওয়ার লক্ষ্যে রেফারিদের দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত দেওয়ার জন্য প্রলুব্ধ করে। তবে বিতর্ক ও পক্ষপাতিত্ব ফুটবল বিশ্ব সবসময়ই দেখে আসছে। এটি নতুন কিছু না। ফুটবল এসব বিতর্ক ও পক্ষপাতিত্ব থেকে হয়তো কখনোই সম্পূর্ণ মুক্তি পাবেনা।
এ বিশ্বকাপ জন্ম দেয় অসংখ্য জাদুকরী মুহূর্তের, অসংখ্য বীরগাথার, অসংখ্য চমকের ও অসংখ্য অঘটনের। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স ও ফেভারিট আর্জেন্টিনার গ্রুপ পর্বে বিদায়, সেনেগালের প্রথম আসরেই বাজিমাত, তুরস্ক ও দক্ষিণ কোরিয়ার অবিশ্বাস্য যাত্রা, অলিভার কানের বিরত্ব, রোনালদো-রিভালদো-রোনালদিনহোদের পায়ে পায়ে অসংখ্য জাদুকরী মুহূর্ত; সব মিলিয়ে সেবারের বিশ্বকাপ ছিলো চিরস্মরণীয়।
দীর্ঘ ২০ বছর পর আগামী মাসে আবারও এশিয়ায় বসছে বিশ্বকাপের আসর। এবার আয়োজক কাতার। এ বিশ্বকাপ নিয়ে বরাবরের মতো কোটি কোটি ফুটবল ভক্তদের প্রত্যাশা আকাশচুম্বী। হয়তো আবারও আমরা দেখতে যাচ্ছি অসংখ্য ঘটন-অঘটন ও চমক, আবারও স্বাক্ষী হতে যাচ্ছি অসংখ্য জাদুকরী মুহূর্তের। "দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ" বলে কথা!
- 0 মন্তব্য