• ফুটবল

নেপলস, ফুটবল; ম্যারাডোনা- এক চিলতে রোদ্দুর ।

পোস্টটি ১০৮৫ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

দক্ষিন ইতালির সমুদ্রবন্দর ঘেষা ছবির মতো সুন্দর অথচ ছিমছাম সুনসান এক শহর; রঙ্গ-বেরঙ্গের দারুণ কারুকার্যময় ঘরবাড়ি চোখে পড়ে দূর-দূরান্ত থেকে। শহর থেকে বহু দূরের পর্বত ভিসুভিয়াসের এক প্রান্তে বসে বেজায় মন খারাপ করে বসে আছে এক যুবক। বাবা'কে দেয়া কথা রাখতে পারেনি সে। ছোটবেলায় যার স্বপ্ন ছিলো দানবাকৃতির ভিসুভিয়াস পর্বতমালার মতোই সুউচ্চ। একটিবার হলেও নেপলসের ঈশ্বর ম্যারাডোনার খেলে যাওয়া ক্লাবে খেলা। দুর্ঘটনায় ডান হাত কাটা গেছে তার, সাথে মুছে নিয়ে গেছে সব স্বপ্ন। ভাবতেই মনের অজান্তে চোখ বেঁয়ে কান্নার তোপ নামে, পরক্ষণেই রঙ্গীন হাসি ফুটিয়ে মন ভালো করে দেয় তার শহরের ফুটবল আমেজ। বাবার রেখে যাওয়া ল্যাগেসি, যুগযুগান্ত ধরে চলে আসা আকুন্ঠ সমর্থন রক্তে মিশে আছে। 

উপরে বর্ণিত যুবকের গল্পটি আপাদমস্তক কল্পিত। তবে নেপলসে জন্মানো প্রতিটি যুবকের জীবনের সাথে ফুটবল যেভাবে মিশে আছে, তা যে কল্পনাতীত সুন্দর সে কথা বলাই বাহুল্য।

অথচ কথা ছিলো এ শহরের বিখ্যাত পিৎজা'র মোহে পড়ে যুবকেরা কিংকর্তব্যবিমুঢ় অগোছালো জীবন যাপনে অতিষ্ঠ হয়ে উঠবে। তারা হবে উঠবে কোনো শিল্পীর বেশে। জগৎবিখ্যাত সব শিল্পকর্ম এঁকে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিবে। কিংবা রাজনীতির নতুন সব পাঠ চর্চা করে দেশকে নিয়ে যাবে নতুন কোনো সম্ভাবনার বন্দরে।

কিন্তু তা না হয়ে কিভাবে গোটা একটা শহরের তরুণ সমাজ, কাঁচাপাকা চুলের স্বল্প বৃদ্ধ থেকে বয়সের ভারে ন্যুব্জ দাদুর সমাজ- ভার্সিটি পড়ুয়া তরুণী থেকে সংসার সামলানো রমনী; সবাই একটা সরল বিন্দুতে মিলিত হয়ে গেছে কোনো এক সহজ সমীকরণে। সকাল সন্ধ্যা খাবারে, স্নানে, রান্নায়- নৈশভোজে অহেতুক আলাপচারিতায় ফুটবল এবং ফুটবল-ই যেখানে একমাত্র বিষয়; সেখানে মার্ক্সিজম, লেফটিস্ট- রাইটিস্ট, কম্যুনিজম- ডেমোক্র্যাটিক- অটোক্র্যাটিক আলাপ বড্ড বেমানান দেখায়।

নেপলস, আহা কি দারুণ শহর। মেডিটেরানিন সাগরের স্বচ্ছ নীল পানি মুগ্ধ করে। মুগ্ধতা তো এ শহরের কতকিছু'তেই আছে। সমুদ্রতীর, রঙ্গীন বাড়িগুলো কিংবা রাস্তায়- অলিতে-গলিতে সারি সারি ক্যাফে-রেস্তোরা। ভোজনরসিক'দের কাবু করে ফেলে পিৎজার ঘ্রাণ। তবে এসবের কোনো'টাই তাদের উপাসনালয়ের চেয়ে বেশি রোমাঞ্চকর নয়। নাহ, আমি চার্চগুলোর কথা বলছি না। বলছি এস্তাদিও সান পাওলো'র কথা। সাদামাটা একটা স্টেডিয়াম। অথচ এ শহরের ফুটবল ভক্ত'রা সান পাওলো'কে দেখে ভিন্ন এক চোখে। ষাটের দশক থেকে নেপলস শহর কেন্দ্রিক গড়ে উঠা নাপোলি ক্লাবকে আতিথ্য দিয়ে আসছে এই স্টেডিয়াম। 

নেপলসের রাস্তাঘাট, পুরনো বিল্ডিংয়ের দেয়ালগুলো সব শিল্পীদের ভাবুক মনের খেয়ালে জায়গা করে নিয়েছে। তাইতো তারা মনের মাধুরি মিশিয়ে গ্রাফিতি'তে ভরিয়ে দিয়েছেন সব দেয়াল। বাস স্টেশন কি আন্ডারগ্রাউন্ড ট্রেন লাইন- সবখানেই গ্রাফিতির ছোঁয়া। এতোসব আর্টের ভীড়ে সবচেয়ে বেশি যার গ্রাফিতি চোখে পড়বে তিনি ম্যারাডোনা।

নেপলস শহরে দুই ঈশ্বরের বাস। ধার্মিকরা উপাসনালয়ে মাথা ঠেকিয়ে ফিরেই মনেপ্রাণে ম্যারাডোনার ভক্তিতে সরব থাকেন। ম্যারাডোনা কিভাবে এই ঐতিহাসিক মেট্রোপলিটন শহরের ঈশ্বরে পরিণত হলেন তা জানতে হলে ফিরতে হবে অনেক দূরের পথ। নেপোলিতিয়ান'রা বিশ্বাস করে ম্যারাডোনা আর্জেন্টিনায় জন্মেছিলেন ভুল করে। তার নাকি জন্ম হওয়া উচিৎ ছিলো ইতালির নেপলসে।

ম্যারাডোনা তখন বার্সালোনায় খেলেন; রেকর্ড পরিমান ট্রান্সফার ফি'তে তাকে ক্লাবে ভেড়ায় বার্সা। বুয়েনস আইরেসের প্রাণহীন জীবন, দারিদ্র্যতার বেড়াজাল আর কর্মজজ্ঞহীনতা থেকে উঠে বার্সায় এসে ম্যারাডোনা আবিষ্কার করলেন ভিন্ন এক জীবন। যেখানে চাকচিক্যময় আভিজাত্য, মদ নারী- জুয়া সহজলভ্য। শুরু হলো তার বেপরোয়া জীবনযাপন। খেলার মাঠ, কি মাঠের বাইরে তাকে চেনা গেলো ভিন্ন এক রূপে। এরমধ্যেই আবার শরীরে বাঁধিয়ে ফেললেন হেপাটাইটিস; একবার গোঁড়ালি ভেঙ্গে ৩ মাস তাকে থাকতে হলো মাঠের বাইরে। একবার তো বিপক্ষ দলের এক ডিফেন্ডারের কাছ থেকে পেলেন জীবননাশের হুমকি; ক'দিন পরেই এক সাংবাদিকের উপর চড়াও হয়ে বেদম পেটালেন। কি উশৃংখল জীবনটাও না পার করছিলেন ম্যারাডোনা।

তবে অস্থির সে সময়ে স্বস্তি হয়ে তার পায়ে ফুটেছিলো এক বিস্ময় ফুল; যে ফুলের সুভাসে পাগল করে রেখেছিলো তাবত ফুটবল প্রাণ জনতাকে। সুবাসিত ফুলের ঘ্রাণ এতোটাই চমৎকৃত ছিলো যে বার্নাব্যুয়ে রিয়ালকে হারার পর রিয়ালের সমর্থকরা দাঁড়িয়ে সম্মান জানাতে বাধ্য হয়েছিলো ম্যারাডোনাকে। তবু বার্সায় শেষটা সুখের ছিলো না তার, বোর্ড কর্মকর্তারা ম্যারাডোনার খামখেয়ালি আচরনে স্পষ্টতই খুশি ছিলেন না। তারা তাকে যেতে দিলেন। 

মিডিয়ার আর সমথকদের সামনে ম্যারাডোনাকে উপস্থিত করা হলো '৮৪'র জুলাইয়ের এক দুপুরে। এস্তাদিও সান পাওলো কানায় কানায় পরিপূর্ণ। হাজার সত্তুরেক মানুষের মুখে 'হো ভিস্তো ম্যারাডোনা, হো ভিস্তো ম্যারাডোনা' শুনে যারপরনাই অবাক হয়েছিলেন ডিয়াগো; সমস্বরে সবাই বলছে 'আমরা ম্যারাডোনাকে দেখেছি'। নেপোলিতিয়ান সাম্রাজ্যে অভিষিক্ত হওয়ার পূর্বে ম্যারাডোনা নিশ্চয়ই ভাবেন নি এই বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস ভিন্নমাত্রায় পৌঁছাবে। 

মাত্র কয়েক বছর আগে ভূমিকম্প কাঁপিয়ে দিয়ে গেছে পুরো শহর। নাপোলির প্রচন্ড দুঃসময়। লীগ থেকে অবদমন হওয়াটা ছিলো সময়ের ব্যাপার। ক্লাবের স্পোর্টিং ডিরেক্টর আন্তোনিও জুলিয়ানো ম্যারাডোনাকে নেপলসে নিয়ে আসার সময় কথা দিয়েছিলেন; তিনি আসলে ক্লাবের সমর্থকরা তার জন্য মরতেও চাইবে। তাকে তারা ঈশ্বর মানবে। ম্যারাডোনা তখন নেপোলিতিয়ানদের সম্পর্কে স্পষ্ট একটা ধারণা পেয়ে গেলেন। ক্ষুধার্ত মানুষেরা খাবারের জন্য চিৎকার না করে ডাকতে থাকলো তাকে- 'টাচড বাই গড' নামে আত্মজীবনীতে অকপটে লিখে গেছেন ডিয়াগো ম্যারাডোনা : আমি তাদেরকে কিভাবে না করতে পারি!

মাদকের অবাধ বিচরন আর সমস্ত ক্রাইমের আদর্শ জায়গা তখন নেপলস। শহরে মেয়র নেই; ম্যারাডোনা তো আছেন এই ভেবে কত রজনী কাটে শহরের। ৮৪'র পর থেকে পরবর্তী সাত বছরে ম্যারাডোনা নাপোলির জন্য যা করে দেখিয়েছেন তা কেবল কল্পনাতেই সম্ভব। কোনো রকমে লীগে ঠিকে থাকা দল স্কুডেট্ট জিতলো দু'বার, ইউরোপিয়ান ট্রফি ঘরে তুললো একবার। আরোও দু'বার লীগ শিরোপার কাছে গিয়েও রানার্সআপ হলো। বলতে গেলে তখন ছিলো নাপোলির প্রাইম সময়। ব্যাক্তিগতভাবে ম্যারাডোনাও সেরা সময় পার করছিলেন নেপলসে।

তবে 'ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে' প্রবাদের মতোই ম্যারাডোনাও বদলাতে পারলেন না নিজেকে। লাস্যময়ী বার্সালোনায় তাকে কোকেইনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো কতিপয় বন্ধু; সে কোকেইনেই তখন তিনি আসক্ত হয়ে পড়লেন। নাইট ক্লাব, নারী- জুয়া বাজি আর মাদকে বদ হয়ে ক্যারিয়ারটাই হুমকির মুখে ফেলে দিলেন তিনি। তার ব্যক্তিগত জীবন এতোটাই বেপরোয়া হয়ে উঠছিলো যে মাঠের খেলায় তাকে অপরিচিত মনে হতো। প্রেক্টিসে না যাওয়া, ম্যাচ খেলতে অনিচ্ছা, অসুস্থতার নাম করে হলিডে পার করা ম্যারাডোনা ভেস্তে যাচ্ছিলেন। নেপলসের অগুনতি বেওয়ারিশ সন্তানের পিতা ম্যারাডোনা অন্তত হাজার আটেক মেয়ের সঙ্গে শুয়েছেন- এ কথা খোদ তার ড্রাইভারই জানান।

নেপলসে ফুটবল বিপ্লব ঘটানো ম্যারাডোনা কতটা সফল ছিলেন সে প্রশ্নের জবাব খুব সহজে দেয়া যায়। ম্যারাডোনা নাপোলিতে আসার পূর্ব থেকেই তাকে নিয়ে যে উন্মাদনা তৈরি হয়েছিলো নেপলসে, সেটি কয়েক মাত্রায় বৃদ্ধি পেলো যখন তিনি স্ব-শরীরে উপস্থিত হয়ে কড়া নাড়লেন তাদের আবেগে। নাপোলির হয়ে ম্যারাডোনা কত গোল করলেন, কোন কোন রেকর্ড ভাঙ্গলেন আর কত ইতিহাস গড়লেন সে সমীকরণে যাচ্ছি না। তবে ম্যারাডোনা যে সে ক্লাবের ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতার রেকর্ড নিজের করে রেখেছিলেন বহুদিন, সেটা বলার লোভ সামলাতেও পারছি না।

১৯৮৬/৮৭ মৌসুমে নাপোলিকে লীগ শিরোপার স্বাদ দিলেন লিটল ম্যাজিশিয়ান। সে এক ভয়ংকর সুন্দর মুহুর্ত। পুরো এক সপ্তাহ দক্ষিণ ইতালির এই শহরে চললো বাঁধ ভাঙ্গা উল্লাস। রাস্তায় পার্টি চললো সারারাত; গাড়ি আর মোটরবাইকে করে র‍্যালি করলো উল্লসিত সমর্থকেরা। কফিন পুড়িয়ে, ডেথ নোটিস টানিয়ে ভক্তরা ঘোষণা দিলো 'মে '৮৭, ইতালির অন্য পাশ [ য্যুভেন্তাস/মিলান] আজ পরাজিত এবং একটি নতুন সাম্রাজ্যের জন্ম নিলো।' 

ম্যারাডোনা ইতালিকে দুটো সমান ভাগে ভাগ করে দিলেন। নেপলসকে মানুষ নতুন করে চিনতে শুরু করলো। রেনেসাঁসের মতো নতুন একটি রেভ্যুলেশনের জন্ম দিলেন তিনি। নাপোলির হয়ে '৮৭'তে কোপা ইতালিয়া, '৮৯ এ ইউয়েফা কাপ এবং '৯০ এ ইতালিয়ান সুপারকাপ এবং ঐ মৌসুমে শেষবারের মতো নাপোলিকে লীগ শিরোপা জেতানো ক্যাপ্টেনের আর্মব্যান্ড পরা ডিয়াগো আরমান্দো ম্যারাডোনা তখন নেপলসের জীবিত কিংবদন্তী। এরইমধ্যে '৮৬ বিশ্বকাপ জেতা 'হ্যান্ড অফ গড' বিশ্বব্যাপী সমান জনপ্রিয়; তার খ্যাতি তখন পৃথিবীর আনাচে-কানাচেতে। তবে তার ব্যক্তিগত উশৃংখল জীবন নাপোলিতে তাকে বেশি দিন থাকতে দেয় নি! মাদক সংক্রান্ত মামলায় ১৫ মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে নাপোলির ঈশ্বর বিদায় নেন তার প্রাণের শহর থেকে। ১৯৮৪ থেকে ১৯৯১, এই সাত বছরে কুড়ানো সম্মান আর ভালোবাসা ভেস্তে যায় নি যদিও। ২০০০ সালে তার সম্মানে নাপোলি ক্লাব তাদের ১০ নাম্বার জার্সিটি চিরতরে উঠিয়ে দেয়।

ফুটবলে ইতালির নামডাক শত বছরের। ১২০ গজের পিচে তাদের চেয়ে বেশি আবেগ নিয়ে কেউ খেলতে নামে বলে আমার মনে হয় না। ব্রাজিলে ফুটবল যখন ধর্ম, ইতালিতে ফুটবল তখন উপাসনালয়। ম্যারাডোনা তা বুঝতে ভুল করলেন। '৯০ বিশ্বকাপে এস্তাদিও সান পাওলোতে পাঁচটি ম্যাচ আয়োজন হয়; পঞ্চম ম্যাচটি ছিল ইতালির বিরুদ্ধে আর্জেন্টিনার সেমিফাইনাল ম্যাচ। ম্যারাডোনা তার নেপলস শহরে সমর্থকদের কাছে আর্জেন্টিনার জন্য সমর্থন চাইলেন। কিন্তু খোদ নেপলসের ভক্তরা তাকে চমকে দিয়ে জানালেন, ম্যারাডোনা আমরা নেপলস বাসী আপনাকে ভালোবাসি। কিন্তু ইতালি আমাদের মাতৃভূমি। হতাশ ম্যারাডোনা যদিও জয় নিয়েই ফাইনালে পা রেখেছিলেন, তবু মনে করতেন সেদিন মাঠে আর্জেন্টিনার সমর্থক দূরে থাক- জাতীয় সঙ্গীতটাও বোধহয় বাজলো না।

সেবার'ই শেষ। ঈশ্বরের আশীর্বাদ বোধহয় উঠে গিয়েছিলো নাপোলি থেকে। তারপর গুনে গুনে তেত্তিশ'টা বছর কাটলো। নাপোলি আর লীগ শিরোপা জিততে পারলো না। সব শেষেরও একটা শেষ থাকে। তাই যেন হলো অবশেষে।

৩৩ বছর পর আবারো লীগ শিরোপা নিজেদের করে নিলো নেপোলিতিয়ান'রা। উদিন'র বিপক্ষে সেদিন কেবল একটা ড্র'য়ের প্রয়োজন ছিলো নাপোলির। অথচ গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়ে ম্যাচ হারায় শঙ্কায় ছিলো মিনিট পঞ্চাশেক। তারপর ত্রানকর্তা হিসেবে হাজির হলেন ভিক্টর ওসিমহ্যন; তার গোলে ম্যাচ ড্র হওয়ার পাশাপাশি ২০২২-২৩ সিরিএ শিরোপাও ঘরে তুললো নাপোলি। ম্যাচ মাঠে ঢুকে সমর্থকেরা বাঁধভাঙা উল্লাসে ফেটে পড়ে মূহুর্তেই।

এ তো কেবল শুরু। ইতালিয়ান ফুটবল উন্মাদনা সবার জানা। নেপোলিতিয়ান সমর্থকেরা যেন বহুদিন পর তাদের হারানো মর্যাদা ফিরে পেয়েছে। ঠিক যেন '৮৭ সালের পুনরাবৃত্তি; তবে এর মাত্রা কয়েক হাজার গুন বেশি। পুরো শহর ছেয়ে গেছে আনন্দ মিছিলে। হাজার হাজার সমর্থক বাজি ফুটিয়ে রাঙ্গিয়ে দিয়েছে পুরো শহর। সমুদ্র ঘেরা ছবির মতো সুন্দর শহরটি আজ যেন এই আনন্দমুখর ক্যানভাসে পরিনত হয়েছে; যে ক্যানভাসে মনের মাধুরি মিশিয়ে ভক্তরা আঁকছেন অনন্য সব শিল্পকর্ম।

এ যেন এক নতুন ভোরের আলো খেলে গেলো পুরো শহরে। এক চিলতে রোদ সমস্ত গায়ে মেখে নেপোলিতিয়ান সাম্রাজ্যে ঢেউ খেলে গেলো ভীষন উল্লাসে। নেপলসে এক নতুন ভোরের আলোর জন্য কত জীবন সংগ্রাম করতে হয়েছে; তবু অবশেষে সে আলো একটুকু জীবনের সমস্ত সম্ভাবনার হাতছানি দিয়ে গেলো। উপর থেকে কেউ তো একজন দেখছেন তাদের কীর্তিকলাপ। যার অনুপস্থিতি পীড়া দিলেও মনের সন্তপর্ণে তার নাম জপে স্মরণ করছেন সমর্থকেরা।

আর হ্যাঁ, ম্যারাডোনা নিশ্চয়ই জানেন না, তার প্রাণের এস্তাদিও সান পাওলো এখন 'এস্তাদিও ডিয়াগো ম্যারাডোনা।'

আহমদ আতিকুজ্জামান