• ফুটবল

পিআইএফ ও ইউরোপিয়ান ফুটবলের নব্য প্রতিদ্বন্দ্বীর উত্থান

পোস্টটি ৬২৮ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

আল নাসরে রোনালদো, ইন্টার মায়ামিতে মেসি, আল ইতিহাদে বেনজেমা আর কান্তে। কি ভাবছেন, লিস্ট শেষ? আরে এ তো সবে শুরু। সামনে অপেক্ষা করছে আরও অনেক কিছু। সামার ট্রান্সফার উইন্ডো এখনো ওপেনই হয়নি, এর মধ্যেই রিয়াদ মাহরেজ, সন হিউং মিন, ইল্কায় গুন্ডোগান, উইলফ্রিড জাহা, আলেক্সিস সাঞ্চেজের মতো আরও অসংখ্য জনপ্রিয় সব তারকাদের সাথে সউদি ক্লাবগুলো ঘিরে নানারকম গুঞ্জন চাউর হতে শুরু করেছে। পুরো ব্যাপারটা ঘটছে রীতিমতো অবিশ্বাস্য গতিতে। পিআইএফ ফুটবল বিশ্বে হাজির হয়েছে এক বিপ্লবের বার্তা নিয়ে, আর ইতোমধ্যেই তারা যা করেছে, তাতে তাদের সফল বললেও কম বলা হয়।

একটু পেছন ফিরে তাকানো যাক। ২০০৮ সাল। প্রিমিয়ার লিগের মিড টেবিল ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটির মালিকানা গ্রহণ করে আরব আমিরাতের ধনকুবের শেখ মনসুরের আবু ধাবি ইউনাইটেড গ্রুপ। এর তিনবছর পর ফ্রেঞ্চ ক্লাব পিএসজির স্বত্ব কিনে নেয় কাতারি ধনকুবের নাসের আল খেলাইফির প্রতিষ্ঠান কাতার স্পোর্টস ইনভেস্টমেন্ট বা কিউএসআই। এসব খুব বেশিদিন আগের কথা না। আর ফুটবলে মধ্যপ্রাচ্যের অনুপ্রবেশ টা মূলত তখনই শুরু হয়।

এরপর কিছু সময়ের জন্য দৃশ্যপটে হাজির হয় চীন। তাদের অবশ্য প্রচেষ্টার কমতি ছিলোনা। ইউরোপ থেকে বেশ কিছু পরিচিত মুখ টেনে নিয়েছিলো, পাশাপাশি জনপ্রিয় কিছু ম্যানেজারও নিয়োগ দিয়েছিলো। আমার মতো সাধারণ ফুটবল ফ্যান রা মূলত তখনই প্রথম এশিয়ান ফুটবলে একটু ফোকাস করে। বিশেষভাবে একটি ক্লাবের কথা না বললেই নয়, গুয়াংজু এভারগ্রান্ডে, যারা বেশ কিছু বড় বড় তারকা সাইন করে তখন চীনে ও এশিয়ায় বেশ আধিপত্য বিস্তার শুরু করেছিলো। তবে তাদের এ অগ্রযাত্রা খুব বেশিদিন ধরে রাখতে পারেনি।

চীনের অগ্রগতি তুলনামূলক ভাবে স্লো ছিলো,পাশাপাশি চীনে তাদের সেসময় নানারকম ইস্যু ফেইস করতে হয়, বিশেষভাবে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ইস্যু। সবমিলিয়ে তারা আবার আস্তে আস্তে দমে যেতে থাকে। ওদিকে এমএলএস অবশ্য অনেক আগে থেকেই এক্টিভ ছিলো, তবে কখনোই তারা ইউরোপের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারেনি। বড় তারকাদের জন্য এমএলএস ছিলো শুধু ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে এসে কিছু পয়সাকড়ি কামিয়ে নেওয়ার জায়গা, এ ছাড়া আর কিছুনা।

image_search_1686172863308
আর সবশেষে, এই অল্প কিছুদিন আগে এই কম্পিটিশনে নাম লেখায় সৌদি আরব। এখানে সবচেয়ে লক্ষণীয় ব্যাপারটা হলো, সৌদির প্ল্যান টা অন্যদের থেকে একদমই আলাদা। আর তাদের এ মিশনে তারা অগ্রসর হচ্ছে অতি দ্রুত। পিআইএফ মূলত ফুটবল বিশ্বের এ প্রতিযোগিতায় নেমেছে এক অতীব দ্রুত ও যুগান্তকারী প্ল্যান নিয়ে। আর তারা তাদের সে প্ল্যান অনুযায়ী ক্রমাগত এগিয়ে চলেছে। ২০২১ এর অক্টোবরে নিউক্যাসল ইউনাইটেডের মালিকানা অধিগ্রহণ ছিলো ইউরোপিয়ান ফুটবলে প্রবেশে তাদের প্রথম পদক্ষেপ। আর সেটা বেশ ভালোমতো সম্পন্ন হওয়ার পর এখন তারা তাদের মিশনে আত্মনিয়োগে পুরোপুরি প্রস্তুত।

অদূর ভবিষ্যতে তারা নিউক্যাসলের মতো আরও বেশ কিছু ইউরোপীয় ক্লাব কন্ট্রোল করবে তা নির্দ্বিধায় বলা যায়, এবং সেটার ধারা বর্তমানে অব্যাহত আছে, এ নিয়ে অসংখ্য নিউজও হচ্ছে প্রতিদিনই। তবে এটা তাদের মূল লক্ষ্য না একেবারেই। তাদের প্রধান লক্ষ্য হলো ইউরোপের সাথে প্রতিযোগিতায় নামা, ইউরোপকে টেক্কা দেওয়া, অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন সাধনের মাধমে সৌদি আরব তথা মধ্যপ্রাচ্য কে ফুটবলের অন্যতম রঙ্গমঞ্চ হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করা। আর তাদের এ লক্ষ্য অর্জনে তারা সবকিছু করতে প্রস্তুত।

আর তাদের এ মিশন সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান নিজে। তার নেতৃত্বে সম্প্রতি তাদের এ মিশন সম্পর্কে অফিসিয়াল এনাউন্সমেন্ট ও এসেছে। তারা এ মিশনের নাম দিয়েছে "স্পোর্টস ক্লাবস ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড প্রাইভেটাইজেশন প্রোজেক্ট"।

তাদের এ মিশনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করছে মূলত দুটি বিষয়। প্রথমত তাদের রয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ, যা ইনভেস্ট করার মতো যথেষ্ট খাতই তাদের নেই। আর ফুটবলে ইনভেস্ট করার মাধ্যমে তারা এখন সেটার পুরো সুবিধা নিতে পারবে। আর দ্বিতীয়ত, তারা কাজ করছে সবাই মিলে একদম সংঘবদ্ধ ভাবে। পিআইএফ ইতোমধ্যেই সৌদি প্রো লিগের শীর্ষ চার দল আল ইতিহাদ, আল নাসর, আল হিলাল ও আল আহলির মালিকানা করায়ত্ব করেছে ও নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি নিজেদের হাতে নিয়েছে। তাই মাঠের খেলায় একে অন্যের ঘোর প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও পিআইএফ এর এ মিশনে সবাই এক হয়ে মাঠে নেমেছে।

image_search_1686173429790
সত্যিকার অর্থে, তারা যেভাবে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে ও সুসংগঠিত ভাবে অগ্রসর হচ্ছে, তাতে মনে হয়না এ মিশনে তারা ব্যর্থ হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এরপর আসলে কি হবে?

স্পষ্টত এটার সবচেয়ে বড় প্রভাব টা ইউরোপিয়ান ফুটবলেই পড়বে। ফুটবলের চলমান চিরায়ত চরিত্রটাই হয়তো পরিবর্তিত হয়ে যাবে। ইউরোপিয়ান ফুটবল একটা চরম অবস্থার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। আমরা হয়তো অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ফুটবল জগতের পুরোপুরি ভিন্ন এক চিত্রের মুখোমুখি হতে যাচ্ছি।

এটাকে কি ফুটবলের গ্লোবালাইজেশন বলা যায়? সবমিলিয়ে এটা কি ফুটবলের জন্য আশীর্বাদ, নাকি অভিশাপ? এটা কি ফুটবল কে আরও রঙিন ও আকর্ষণীয় করে তুলবে, নাকি পুরো সিস্টেমটাকেই একদম বিশৃঙ্খল করে ফেলবে?

বিরাট এক পরিবর্তন দুয়ারে কড়া নাড়ছে। এক বিপ্লবের গন্ধ পাচ্ছি।