• ফুটবল

এসি মিলানে জিমি গ্রিভসের দুর্ভাগ্যজনক অধ্যায়

পোস্টটি ৬০৩ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

এটি ছিল ডিসেম্বর, ১৯৬১। ব্ল্যাকপুলের বিরুদ্ধে ৫-০ ব্যবধানে জয় পায় টটেনহ্যাম। স্পার্সদের হয়ে অভিষেক ম্যাচে হ্যাটট্রিক করার মাধ্যমে প্রিয় হোয়াইট হার্ট লেন জনতার কাছে নিজেকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন জিমি গ্রিভস। ২৬৬ জনের মধ্যে ক্লাবটির সেরা গোলদাতা হওয়ার দৌড়ে এটি ছিল তার প্রথম হ্যাটট্রিক। এসি মিলানের হয়ে সিরি আ-তে হতাশাজনক স্পেলের পরে ইংলিশ ফুটবলে গৌরবোজ্জ্বল প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন জিমি।

স্পার্স সমর্থকদের কাছে প্রিয়তম হওয়ার আগে, গ্রিভস ইতিমধ্যে পশ্চিম লন্ডনের ক্লাব চেলসিতে তার দুর্দান্ত গোল করার ক্ষমতা প্রদর্শন করেছিলেন। তিনি ছিলেন একজন শিকারী এবং নির্দয় ফিনিশার। গতি ব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে সহজে ড্রিবল করার ক্ষমতা ছিল তার। স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে ১৭ বছর বয়সে অভিষেক হয় গ্রিভসের। “দ্য ব্লুজ”দের হয়ে ১৩২ বার প্রতিপক্ষের জালে বল জড়িয়েছেন জিমি। ১৯৬০/৬১ মৌসুমে ৪৩ গোল করার মাধ্যমে এই ইংলিশ স্ট্রাইকার ব্লুজদের হয়ে লীগে সর্বোচ্চ গোলদাতা বনে যান।

গ্রিভসের ইংলিশ লীগে এই অসাধারণ পারফরম্যান্স ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছিল এবং তার ফলস্বরূপ তাকে ইংল্যান্ড জাতীয় দলে ডাকা হয়। তবে সেসময়কার চেলসির দুর্ধর্ষ ফ্রন্টলাইন বড় কোনো শিরোপা জিততে পারেনি। চেলসি তখন ইংল্যান্ডের টপ ফ্লাইট ফুটবলে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হিমশিম খাচ্ছিল। তার নজরকাড়া ১৯৬০/৬১ মৌসুমের পরে, গ্রিভস অনুভব করেছিলেন যে স্ট্যামফোর্ড ব্রিজ ছেড়ে যাওয়ার সময় এসেছে এবং তিনি একটি নতুন চ্যালেঞ্জ খুঁজছিলেন যা তার ক্যারিয়ারকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে সহায়তা করতে পারে। ডাবল বিজয়ী টটেনহ্যাম তাকে দলে নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল, তবে চেলসি তাদের নগর প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে গ্রিভসকে বিক্রি না করার সিদ্ধান্তে অনড় ছিল। 

বিরল ধারার একজন স্ট্রাইকার হিসাবে গ্রিভসের খ্যাতি সমগ্র ইউরোপ জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং ১৯৬১ সালের গ্রীষ্মে এসি মিলান সান সিরোতে গ্রিভসকে নিয়ে আসার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছিল। ইতালির জায়ান্টরা তাদের মধ্যস্থতাকারী গিগি পেরোনাসকে ইংল্যান্ডে পাঠায়। যাকে গ্রিভস পরে "গডফাদারের একজন কাস্ট সদস্য" হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। এই ক্যারিশম্যাটিক প্রতিনিধি দ্রুত গ্রিভসকে মুগ্ধ করে এবং তাকে স্বাক্ষর করার জন্য ৮০,০০০ পাউন্ডের একটি চুক্তিতে সম্মত হন।

এই পদক্ষেপটি আপাতদৃষ্টিতে সমস্ত পক্ষের জন্য নিখুঁত ছিল। গ্রিভসের জন্য চেলসি যে ট্রান্সফার ফি পাবে তা তাদের বহন করা আর্থিক সমস্যাগুলো দূর করবে এবং এতে করে ইংল্যান্ডের এই খেলোয়াড় তার চমকপ্রদ গোলের মাধ্যমে নিজের ক্যারিয়ারে ট্রফি যোগ করার বাস্তবসম্মত সুযোগ পাবে। চেলসিতে সপ্তাহে ২০ পাউন্ড উপার্জন করা গ্রিভসের জন্য আরেকটি অনুপ্রেরণা ছিল ইতালিতে তার জন্য অপেক্ষা করা নতুন সম্পদ। মেডিকেল পাশ করার পরে, তাকে তার নতুন ম্যানেজার জিউসেপ ভিয়ানি জানিয়েছিলেন যে, তিনি তার স্ত্রী আইরিনের সাথে ভাগ করে নেওয়ার জন্য একটি বিলাসবহুল পেন্টহাউসসহ সপ্তাহে ১৩০ পাউন্ডের সমতুল্য পাবেন। 

যাইহোক, ইতালিতে তার প্রস্থানের জন্য সমস্ত কিছু ঠিক হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে গ্রিভসের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হতে শুরু করে এবং ফলশ্রুতিতে তিনি চুক্তিটি বাতিল করার চেষ্টা করেছিলেন। গ্রিভস চেলসিকে তার থাকার ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন তবে অর্থসংকটে ভুগতে থাকা ব্লুজরা এই পদক্ষেপটি বাস্তবায়িত করার জন্য আগ্রহী ছিল। "ইতালিতে খেলা এবং বসবাসের সম্ভাবনা সম্পর্কে আমার প্রাথমিক উচ্ছ্বাস দ্রুত কমে গিয়েছিল এবং সপ্তাহগুলো অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে আমার এই পদক্ষেপ সম্পর্কে সন্দেহ শুরু হয়েছিল। আমি আমার ব্যাক্তিস্বাচ্ছন্দ্য পছন্দ করি। আমি লন্ডনের জীবন এবং লন্ডনের জীবনধারা উপভোগ করেছি” এই স্ট্রাইকার পরে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন।

মাত্র ২১ বছর বয়সে জাতীয় দলের হয়ে সফর শেষ করার পরে, গ্রিভস সিরি আ-তে একটি নতুন অ্যাডভেঞ্চারের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন। তবে যাত্রাটি পুরোপুরি পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়নি। ইতালি রওনা হওয়ার দুই ঘণ্টা আগে হিথ্রোতে ডেইলি এক্সপ্রেসের প্রতিবেদক ডেসমন্ড হ্যাকেট গ্রিভসের সঙ্গে যোগ দেন। হ্যাকেট তাকে মধ্যাহ্নভোজের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। দু'ঘন্টা ধরে চমৎকার ডাইনিং এবং ফুটবল কথোপকথনের পরে গ্রিভস বুঝতে পেরেছিলেন যে তিনি তার ফ্লাইট মিস করেছেন। পরবর্তীতে তিনি অন্য ফ্লাইটে করে ছয় ঘন্টা দেরিতে ইতালিতে অবতরণ করেন। 

মিলানিজ জায়ান্টদের সাথে গ্রিভসের বিরোধের শুরুর এটিই প্রথম পর্ব। তার আগমনের অল্প সময়ের মধ্যেই, গ্রিভস তার স্ত্রীর সাথে থাকার জন্য ইংল্যান্ডে ফিরে যান কারণ তাদের কন্যা সন্তানের জন্ম হয়েছিল। এই ইংলিশ স্ট্রাইকার তার স্ত্রী আইরিন এবং তাদের নবজাতকের সাথে কয়েকদিন থাকার জন্য মিলান বোর্ডকে জোর দিয়েছিলেন। মিলান বিষয়টিকে বরং ভিন্নভাবে দেখেছিল এবং লন্ডনে থাকায় এই স্ট্রাইকারকে প্রতিটি অতিরিক্ত দিনের জন্য ৫০ পাউন্ড জরিমানা করেছিল। 

গ্রিভস যখন ইতালির উদ্দেশ্য রওনা হয়েছিলেন, তিনি সরাসরি মিলানে যাওয়ার পরিবর্তে ভেনিসের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিলেন যেখানে তিনি ভ্যালেস্পোর্টের সাথে বুট স্পনসরশিপ চুক্তির ব্যবস্থা করেছিলেন। গ্রিভস যখন এক দিন দেরিতে প্রাক-মৌসুম প্রশিক্ষণের জন্য মিলানে পৌঁছেছিলেন, তখন তিনি জানতে পেরেছিলেন যে তাকে স্বাক্ষর করানো ম্যানেজার ভিয়ানি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন এবং রোসোনেরিদের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।

ভিয়ানির স্থলাভিষিক্ত হন নেরিও রোকো এবং গ্রিভসের ভেনিসে যাওয়ার ইস্যুতে শুরু থেকেই দুজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। গ্রিভস ইংল্যান্ডে আরও স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত ছিলেন এবং রোকোর তীব্র, শৃঙ্খলাবদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গি এই তরুণ ইংল্যান্ড তারকার ক্যারিয়ারের জন্য এক অশনি সংকেত ছিল। “তিনি আমার জীবনকে নরক বানিয়েছেন এবং আমি ঠিক তার মধ্যে সূর্যের আলো দেখিনি। তিনি একজন কঠোর শৃঙ্খলাপরায়ণ ছিলেন যিনি ক্যাপ্টেন ব্লিগকে বিরক্তিকর শিক্ষা দিয়েছিলেন”, গ্রিভস পরে এক সাক্ষাৎকারে এই কথা বলেন। 

রোকো একজন কঠোর টাস্কমাস্টার ছিলেন যিনি গ্রিভসের খাবারের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতেন এবং খাওয়ার সময় তার বিপরীতে বসতেন যাতে তিনি সেগুলি শেষ করেন। আশ্চর্যজনকভাবে, ধূমপানকে রোকো একজন পেশাদার ফুটবলারের অভ্যাস হিসাবে দেখতেন। গ্রিভসের এই সিগারেটের আকাঙ্ক্ষা তার নতুন জীবনযাপনের কারণে বৃদ্ধি পায়। এই ফরোয়ার্ড ধূমপান করার জন্য ট্রেনিং গ্রাউন্ডের বাথরুমে ঢুকে পড়তেন যেখানে তিনি প্রায়শই আবিষ্কার করতেন যে তার বেশ কয়েকজন সতীর্থ একই কাজ করছে।

গ্রিভস যখন রোকোর চাহিদার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে লড়াই করছিলেন এবং মিলানে তিনি যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন তা চেলসিতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠা সুবিধাগুলির সম্পূর্ণ বিপরীত ছিল। গ্রিভস একটি অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ কমপ্লেক্স খুঁজে পায় যার মধ্যে একটি রেস্তোঁরা এবং মাউন্টেন রিট্রিট অন্তর্ভুক্ত ছিল। স্ট্যামফোর্ড ব্রিজ একটি মোটামুটি বড় স্টেডিয়াম ছিল তবে গ্রিভস এখন সান সিরোতে ৮৭,০০০ উৎসাহী ইতালীয় সমর্থকদের সামনে খেলবে। 

মিলানে গ্রিভসের আগমনে চারপাশের পরিস্থিতি বিশৃঙ্খল এবং চাপের ছিল তবে তিনি জানতেন যে তিনি গোল করলেই সবকিছু স্বাভাবিক হবে। ইংল্যান্ডের এই ফরোয়ার্ড অবশেষে লেনেরোসি ভিসেনজার বিপক্ষে সিরি এ-তে অভিষেক করেন এবং প্রত্যাশিতভাবেই তিনি গোল করে তার অভিষেকটা রাঙিয়েছিলেন। গ্রিভস সেই সময় ইতালির সেরা স্ট্রাইকার হোসে আলতাফিনির সাথে খেলেছিলেন, যিনি ছিলেন দলের প্রধান ফরোয়ার্ড।

এদিকে, গ্রিভসকে তার সতীর্থদের জায়গা দেওয়ার জন্য পিছনে ফিরে যেতে হয়েছিল বা উইয়ের দিকে সরে খেলতে হয়েছিল। এমন কঠোর মার্কিংয়ের শিকার হয়েছিলেন যে তাকে দেখে মনে হয়েছিল প্রথম বিভাগে খেলার জন্য তিনি অভ্যস্ত ছিলেন না। তবে ডার্বিতে তিব্র প্রতিদ্বন্দ্বী ইন্টারের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের এই ব্যক্তি প্রায়শই গোল করতে থাকেন। রোসোনেরিদের  স্কুডেত্তোর লড়াইয়ে ১৯৬১ সালের মিলান দলে জিয়ান্নি রিভেরা, জিওভান্নি ট্রাপাটোনি এবং সিজার মালদিনির মতো প্রতিভারাও ছিল।

তিনি যে অসাধারণ গোলস্কোরিং দক্ষতার উপর তার খ্যাতি তৈরি করেছিলেন তা সত্ত্বেও, গ্রিভস হতাশাগ্রস্ত ছিলেন। সাম্পদোরিয়ার সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র য়ের পর দেখা যায়, গ্রিভসের করা গোল রোকোর কাছে আকর্ষণীয় বলে মনে হয়নি।

গ্রিভস মিলানের প্রথম গোলটি করেছিলেন এবং দ্বিতীয়টিতে সহায়তা করেছিলেন তবে ম্যাচের শেষের দিকে গ্রিভসের কর্মকান্ডে রোকো তার উপর ক্ষুদ্ধ হয়েছিলেন। গ্রিভস সাম্পদোরিয়ার খেলোয়াড়দের সাথে তর্কে জড়ান এবং এক ডিফেন্ডারের মুখে থুতু মারেন। ফলস্বরূপ ফ্রি-কিকের ফলে জেনোইস ক্লাবটি একটি পয়েন্ট অর্জন করে। রোকো ড্রেসিং রুমে গ্রিভসের বিরুদ্ধে তার ক্ষোভ প্রকাশ করে যেখানে তিনি স্ট্রাইকারকে লাল এবং কালো শার্টের জন্য অপমানজনক বলে অভিহিত করেছিলেন। 

ইংলিশ এই স্ট্রাইকার অন্তত এটা জেনে স্বস্তি পাবেন যে সিরি আ-তে খেলা অন্যান্য ব্রিটিশরাও নতুন সংস্কৃতির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছিল। গ্যারি হিচেনস একই শহরে ইন্টারের হয়ে খেলছিলেন এবং ডেনিস ল ও জো বেকার তোরিনোর হয়ে খেলছিলেন। ল এবং বেকারেরও গ্রিভসের মতো সিরি এ-র প্রতি ঘৃণা জন্মাতে থাকে। বেকার যে গাড়ি চালানোর সময় আলফা রোমিওতে একটি ল্যাম্পপোস্টের সাথে ধাক্কা লেগেছিল সেই ঘটনা আরও খারাপের দিকে মোড় নেয়। এটি এমন একটি দুর্ঘটনা যা বেকারকে তার জীবনের সাথে লড়াই করতে বাধ্য করেছিল।

ল এবং বেকার বেশিরভাগ সময় তাদের তুরিনের অ্যাপার্টমেন্টে কাটিয়েছিলেন কারণ তারা ইতালীয় সংবাদমাধ্যমের মনোযোগ এড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন। কারণ ইতালির মিডিয়া সবসময় গ্রিভসের পিছনে লেগে থাকত। গ্রিভস পরে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “ইংরেজি এবং ইতালীয় উভয় সংবাদমাধ্যমই আমাকে নিয়ে এমন গল্প লিখেছিল যা প্রশংসার চেয়ে কম ছিল। ইতালীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বিশেষভাবে প্রতিহিংসাপরায়ণ ছিল, যা আমাকে একজন নষ্ট ব্রাট হিসেবে তুলে ধরেছিল”। 

বিষণ্নতা গ্রিভসকে গ্রাস করতে শুরু করে কারণ মিলানের রক্ষণাত্মক কাতানেচ্চিও সিস্টেমের কারণে তিনি মাঠে খেলাটা উপভোগ করতে সংগ্রাম করেছিলেন। যদিও তিনি গোল করা অব্যাহত রেখেছিলেন, তবে পাল্টা আক্রমণের উপর নির্ভরশীল প্রতিরক্ষামূলক গেমপ্ল্যানের অর্থ তিনি দীর্ঘ সময় ধরে বল পায়ে পাবেন না। সেই যুগে প্রথম বিভাগে প্রচুর গোল হত, তবে সিরি এ-তে ইতালিয়ান দলগুলি তাদের রক্ষণাত্মক দক্ষতা প্রদর্শনের কারণে টানটান ব্যাপার ছিল।

মৌসুম এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে এটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে ইতালিতে গ্রিভসের সময় অকালে শেষ হয়ে যাবে। গ্রিভস এবং রোকোর মধ্য সাপে-নেউলে সম্পর্কের মিলান ব্রাজিলিয়ান ডিনো সারনিকে এনে ইংল্যান্ডের ফরোয়ার্ডকে ছাড়াই প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। সারনিকে আলতাফিনির সাথে খেলানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল এবং গ্রিভসকে শীঘ্রই জানানো হয়েছিল যে তাকে ট্রান্সফার তালিকায় রাখা হয়েছে। দু'দিন পরে, গ্রিভসের স্ত্রী আইরিন মিলানের অ্যাপার্টমেন্টের দরজায় কড়া নাড়লেন। সেখানে অন্য দিকে, সেই ব্যক্তি দাঁড়িয়েছিলেন যিনি এই গোলমেশিনকে ইংল্যান্ডে ফিরে আসার প্রস্তাব দেন যা ফুটবলের অমরত্বের পথ প্রশস্ত করেছিল।

গ্রিভস বাড়িতে পৌছে টটেনহ্যামের ম্যানেজার বিল নিকোলসনকে তার বসার ঘরে বসে থাকতে দেখেন। নিকলসন তার ফরোয়ার্ড লাইনকে শক্তিশালী করার জন্য একজন গোলমেশিন খুঁজছিলেন। তার আগের মৌসুমে তারা লিগ এবং এফএ কাপ জিতেছিল। যদিও চেলসি গ্রিভসকে স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে ফিরিয়ে আনতে আগ্রহী ছিল, তবে গ্রিভস টটেনহ্যামে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনায় উচ্ছ্বসিত ছিলেন। 

ইতালিতে মাত্র ১৩ টি ম্যাচ এবং ৪ মাস থাকার পরে গ্রিভস ৯৯,৯৯৯ পাউন্ডের বিনিময়ে ইংলিশ ফুটবলে ফিরে আসেন। নিকোলসন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে গ্রিভস হবে দেশের প্রথম ১০০,০০০ পাউন্ডের চুক্তিবদ্ধ হওয়া ফুটবলার। ব্ল্যাকপুলের বিরুদ্ধে অসাধারণ পারফরম্যান্সের পরে গ্রিভস টটেনহ্যামে কিংবদন্তির মর্যাদা অর্জন করেছিলেন কারণ তিনি একটি দুর্দান্ত ক্যারিয়ার তৈরি করেছিলেন যেখানে তিনি যুক্তিযুক্তভাবে ইংল্যান্ডের সর্বকালের সেরা গোলদাতা হয়েছিলেন। 

গ্রিভস তার ক্লাব ক্যারিয়ারে যে ৩৬৬ টি লিগ গোল করেছিলেন তা ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের একটি রেকর্ড ছিল যা ২০১৭ সালে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো শেষ পর্যন্ত গ্রিভসের মোট গোলকে ছাড়িয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কয়েক দশক ধরে অক্ষত ছিল। দুর্ভাগ্যবশত, মিলানের লাল ও কালো ক্লাবে থাকাকালীন তিনি মাত্র ৯ টি গোল করেছিলেন। ইতালিয়ান সমর্থকরা তাকে স্কুদেত্তো জয়ী হিসেবে দেখতে পারেনি।

মাত্র ২১ বছর বয়সে, একটি নতুন দেশে চলে যাওয়া এবং একটি নতুন সংস্কৃতির সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া গ্রিভসের পক্ষে খুব তাড়াতাড়ি এসেছিল বলেই আমার মনে হয়। ইতালিতে বসতি স্থাপনে ব্যর্থতার দায় কখনোই মিলান বা রোকোর ঘাড়ে চাপিয়ে দেননি এই স্ট্রাইকার এবং স্বীকার করেছেন যে শুরু থেকেই তার এই শহরে মন বসছিল না। তবে তিনি এই সময়টিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন যা তাকে আগের চেয়ে আরও ভাল খেলোয়াড় হিসাবে পরিপক্ক হতে সহায়তা করেছিল। তিনি বলেছিলেন, “আমি সবসময় অনুভব করেছি যে আমি মিলানে একটি ছেলে হিসাবে গিয়েছিলাম এবং একজন পুরুষ হিসাবে ফিরে এসেছি”।