• ক্রিকেট

তামিমের অবসর-ঘটনা: গানটা হোক একান্তই নিজের

পোস্টটি ৮৪১ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

 

তামিমের সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে ‘বেশ’ নয় ‘দেশ’ অবগত বলা যায়। যারা খেলার খোঁজ রাখেন, তাঁরা তো বটেই।  এ ঘটনা কী কী ফল বয়ে আনল, তা নানাভাবে চোখে পড়ছে। যারা যা বলতে চান ও দেখতে চান, তারা তা বলছেন ও দেখছেন। নানারকম ব্যাখ্যা ঘটনার পিছনে দাঁড় করানোর চেষ্টা, ক্ষেত্রবিশেষে সফলতাও আঁচ করা যাচ্ছে। আঁচ করার কাজটা একটু জটিল। অপরের সফলতা কিসে, তা আসলে অন্য কেউ আঁচ করতে পারে খুব কম। তবুও কিছু ধারণা, বলনে ও চলনে আঁচ করা যেতে পারে। 

 

 

তামিমের অবসর ঘোষণা ও আবেগের তাড়না  

 

এই ঘটনা দেখতে দেখতে আপনি ধারণা করতে পারেন, তামিম খুব কষ্ট পাচ্ছে, এতদিনের জায়গা ছেড়ে যাওয়া খুব কঠিন। ক্রিকেটের শুরুটা ভালোবাসা থেকেই হয় সাধারণত, আবেগটা খুব স্বাভাবিক। ভেতরে যদি থাকে আরো চাপা অভিমান, তাহলে তো আর কথাই নেই। রাগটাও তাই বের হয়ে আসে ঐ আবেগের পেছন থেকেই। ‘আপনি স্ট্রেইট বের হয়ে যান’— তামিম সেই মুহূর্তে বলছিলেন একজন ফটো সাংবাদিককে। তামিমের এই বাক্য বা রাগ দেখেও আপনার মধ্যে ধারণা আসতে পারে। পরিস্থিতি ও বিবেচনাবোধ খাটিয়ে সেই ধারণা করা যায়। আবার শুধুমাত্র খুব কম চিন্তা করেই– চোখের দেখায় একরকম ধারণা রাখা যায়। যেমন আপনি দর্শক হিসেবে বলতে পারেন, ‘ছিহ! এ কি ব্যবহার’ বলে শুরুতেই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখলেন এবং আরো অনেক কিছুই আনা যেতে পারে। 

 

 

তামিমের চোখের জল আর আপনার চিন্তার পার্থক্য 

 

‘সেলিব্রেটি’ লোকদের চোখের জল দেখলেই যে আপনার বাঙালি মন বলে ওঠে, এ চোখের পানি নয়, এ অভিনয়। আপনার সেই মন-রে আপনি কীরকম মন মনে করেন? আপনার এই মনটা কীভাবে তৈরি হয়েছে, তা কি অনুমান করতে পারছেন! সেখানেও আসলে ভাবতে হয়, হয়তো ভাবছেননা বলেই পারছেন না।

 

‘ক্রিটিক্যাল থিংকিং’ — খুব চমৎকার জিনিস, আপনি যদি তা ঠিকভাবে কাজে লাগাতে জানেন। আপনি অনেক দৃষ্টিকোণ থেকে ঘটনা দেখার সক্ষমতা তৈরি করছেন, তা খুব ভাল। তবে চোখের জল দেখেই যে মন অভিনয় ভেবে সিদ্ধান্ত নেয় এবং সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে শক্তভাবে আলোচনা চালায়, সেখানে ‘থিংকিংয়ের’ অংশ খুবই সামান্য। আপনি খুঁজেও পাবেননা। অভিনেতা রিয়াজ ও আরো বেশ কিছু ‘উদাহরণ’ এক্ষেত্রে ব্যবহার হয়ে থাকে। সবকিছুকে এত ছোট বাক্সে বন্দী করে ফেলবেন কেনো? এর বেশি আর ভাবার নেই! 

 

 

তামিমের অবসর ঘোষণা পরবর্তী অংশ

 

আপনি খুব স্বাভাবিকভাবে অনুমান করেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে তামিম ফিরবে। এই ভাবনাকে আলাদা ভাবার তেমন কিছুই নেই। বাংলাদেশের বাস্তবতায় এই ভাবনা সামান্যতম রাজনীতি সচেতন মানুষ করতে জানে। আমাদের দেশে ‘কানেক্টেড’ ব্যাপারটা খুব বেশি। আপনি যেহেতু ভাবতে পেরেছেন এ দেশের মানুষ হিসেবে, সেহেতু আপনিও এই ব্যাপারটা ‘রিলেট’ করতে পেরেছেন বলেই ভেবেছেন। এ দেশের নাগরিক হিসেবে আপনার ভাবনার সাথে একই দেশের কার্যকারণ মিলে যাওয়া, এতে গৌরবের তেমন কিছু ঘটে না। বরং এ ঘটনায় কোথায় সমালোচনা, কোথায় দুঃখ আর কোথায় আনন্দ, তা আপনি চাইলে খুঁজতে পারতেন। নতুবা আপনি বরং ‘মজা’– নিতে পারেন, যা সাধারণত নিয়ে আমরা সকলেই অভ্যস্ত।

 

 

আর? 

 

আর হচ্ছে গণমাধ্যম, সামাজিক মাধ্যম ও সমর্থক। এই তিনের কি যে এক সমন্বয় ঘটেছে চারিদিকে। গণমাধ্যম দিয়ে যায়, তা সামাজিক মাধ্যমে দেখে ঝটপট প্রতিক্রিয়া জানায় সমর্থকের দল। সকলেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রেমেই এসেছেন। কোন সন্দেহ নেই। প্রতিক্রিয়া একজন জানাচ্ছেন না। এই ঘটনা নিয়ে নানারকম খবর গণমাধ্যম থেকে বের হচ্ছে। আলাদা আলাদা ধরন ও দৃষ্টিভঙ্গির। ধরুন, একটা বিশাল সমর্থকগোষ্ঠী খুব ‘দুর্বল’ অথচ ‘আকর্ষণীয়’ দৃষ্টিভঙ্গির কিছু রসদ পেল ‘উদ্‌যাপন’ করার জন্য– সেই সুযোগ কি কেউ ছাড়বে? ‘দুর্বল’ কাটিয়ে ‘আকর্ষণীয়’- কে গুরুত্ব দিয়ে গোষ্ঠী ঝাঁপিয়ে পড়বে। এতে আসলে কোথায় কোথায় কার লাভ বা ক্ষতি হয়, তা আরো হিসাব-নিকাশ করে বের করতে হবে। সেই হিসাবনিকাশ করার কষ্টটা কেউ করতে চাই না আমরা। তবে ফোনটা হাতে নিলে আপনি এরচেয়ে কম ভালোও কিছু দেখতে পারবেন না। দেখবেন চোখে শুধু এসবই পড়ছে। 

 

 

কম ভালো না হলেও কিছু ভালো যা হলো 

 

বাংলাদেশের ক্রীড়া গণমাধ্যমের একটা অংশ গঠনমূলক সমালোচনা করতে চায়। ব্যক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে ঘটনা ব্যাখ্যা করতে চায়। আনন্দ ও দুঃখের পার্থক্য রাখতে চায়। এই চাওয়া যাদের, এই পুরো ঘটনায় তাঁরা তাদের কাজে আরো উৎসাহ পেল। অনেক দেখার পরেও, যা না দেখা থাকে– তা তুলে আনার কিছু প্রচেষ্টাও পড়েছে চোখে। প্রেস কনফারেন্সের মধ্যমণি হয়ে যিনি বসে থাকেন, তাঁকে শুধু সরল ব্যাখ্যায় প্রচার না করে, তাঁর ভেতর, অন্তর ও পরিস্থিতি ছেঁচে বের করার কাজ যারা করতে চান– তাঁরা তাদের হাতের মুঠো কিছুটা খুলতে পেরেছেন। সেই মুঠো খুলে কী-বোর্ড চেপে বা মুখের কথা আর ভিডিও-তে তাঁরা জানাতে চান, অনেক দেখার পরেও দেখা থাকে বন্ধু, অনেক কথার পরেও থাকে কথা। আমাদের এই মিছিল তৈরি করুক সে-ই না দেখা ও না বলা কথার সুর। আর সেই সুরে ভাসুক এদেশের মানুষ, গানটা হোক একান্তই নিজের।