• ফুটবল

হেন্ডারসন'কে খোলা চিঠিঃ বিদায় ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাস্টিক

পোস্টটি ৮৮৫ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

শান্ত অম্লান হাসিমুখে বাবার আঙ্গুলে আঙ্গুল ধরে স্টেডিয়ামের আলোয় নিরবে হাটছে এক বালক। তার বয়স দশের কোটায়। বাবার গাম্ভীর্য পাশ কাটিয়ে হঠ্যাৎ সে বলে উঠলো, 'বাবা আমিও একদিন এখানে খেলবো।'

তারা ম্যাঞ্চেষ্টার থেকে ফিরছিলো ইউসিএল ফাইনাল ম্যাচ দেখে। ছেলের দিকে একবার পরম মমতায় তাকালেন ব্রায়ান; ছেলে'র স্বপ্ন কত বড় মেপে দেখলেন। তৎক্ষনাৎ তার মনটাই খারাপ হয়ে গেলো; এই স্বপ্নটা তো তারও ছিলো। 

শখের বসে তিনিও খেলতেন ফুটবল; তবে সেটা কেবলই শখ হিসেবে ধরা হলো যখন ব্রায়ান প্রফেশনাল ফুটবলে পৌঁছাতে পারলেন না। বাধ্য হয়ে সংসারের টানে চাকরি নিলেন পুলিশে। ততদিনে তার ছেলে সান্ডারল্যান্ড একাডেমির সবচেয়ে উজ্জ্বল ছাত্র। সান্ডারল্যান্ড ক্লাবের পাড় ভক্ত তার বাবা মা; দেখাদেখি সেও ক্লাবের ভক্ত। তবে এই ক্লাবের প্রতি ডেডিকেশনের পারদ'টা চূড়ান্তে পৌঁছালো যখন একাডেমি পেরিয়ে ক্লাবের ইয়ুথ দলের জার্সিতে দেখা গেলো তাকে। 

সান্ডারল্যান্ডের ম্যাচ হলেই তাকে নিয়ে যেতেন খেলা দেখতে। বাবার সংস্পর্শে সেই ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা'টা গেঁথে গিয়েছিলো হৃদয়ে। দেখতে দেখতে একাডেমির এই গ্রেজ্যুয়েট ইয়ুথ দল পেরিয়ে সান্ডারল্যান্ডের সিনিয়র দলে ডাক পেয়ে গেলো। 

চেলসির বিপক্ষে সেদিন তার অভিষেক ম্যাচ দেখতে গ্যালারিতে আবেগাপ্লুত বাবা মা অবাক চোখে দেখলেন তাদের ছোট্ট ছেলেটি কিভাবে তার স্বপ্ন পূরণের সিড়ি মাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। সাবস্টিটিউট হিসেবে নেমে কিছুই করতে পারলেন না যদিও, ৫-০ গোলের বিশাল হার নিয়ে বাড়ি ফিরতে হলো তাকে। এ তো কেবল ছিলো প্রফেশনাল ক্যারিয়ারের শুরু। এরপর কতদূর তাকে পাড়ি দিতে হবে তা হয়তো সে নিজেও হিসেব করে দেখেনি। 

সান্ডারল্যান্ড তার প্রিয় ক্লাব। ক্লাবের হয়ে অন্তত সত্তর'বার মাঠে নেমেছিলো সে। সাধারণত মানুষ তার প্রিয় জিনিসের প্রতি আসক্ত থাকে। সে আসক্তি কখনো সীমা ছাড়িয়ে যায়, কখনো বাস্তবতায় পড়ে সে আসক্তি ভাটা পড়ে। পুলিশ বাবার মতোই তার ছেলেরও প্রিয় জিনিসের প্রতি মায়া ছাড়তে হলো; প্রিয় ক্লাব সান্ডারল্যান্ড ছাড়তে হলো বছর তিনেকের সম্পর্ক ছেদ করে।

যা হয় তা নাকি ভালোর জন্য হয়; সে সান্ডারল্যান্ড ছেড়ে পাড়ি জমালো মার্সিসাইডের শহর লিভারপুলে। এর ভিতরে এক মৌসুম আবার খেলা আসা হলো কভেন্ট্রি'তে । স্টিভেন জেরার্ড তখনো দলে, ক্যাপ্টেনের আর্মব্যান্ড'টা তার হাতেই বহুদিন ধরে। 

জুন ২০১১ সাল। 

বাবার আঙ্গুল ধরে হাটতে থাকা গল্পের শুরুর ছেলেটা ইংল্যান্ড ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সফল দলের প্লেয়ার। তার নাম'টাই তো বলা হলো না- জর্ডান ব্রায়ান হেন্ডারসন। 

হয়তো বড় কোনো নাম না; হয়তো সেরাদের সেরা না। তবু অলরেড শিবিরে তার আগমন এক নতুন মাত্রার সূচনা করেছিলো। স্টিভির অনুপস্থিতিতে প্রায়ই তাকে ক্যাপ্টেনের আর্মব্যান্ড পরতে দেখা যায়। অলরেড ফ্যামেলি তাকে যেভাবে আপন করে নিয়েছে এই ক'টি বছরে, তা অকল্পনীয় বলাই বাহুল্য। 

 

তারপর কেটে গেলো কতটা বছর। সাব প্লেয়ার থেকে নিয়মিত; এগার- স্টিভির বিদায়ের পর ক্যাপ্টেনের আর্মব্যান্ড'টাও পাওয়া হয়ে গেলো। ত্রিশ বছর পর অধরা প্রিমিয়ারলীগ শিরোপা এলো এই কাপ্তানের হাত ধরেই। '৯৯ উইসিএল দেখতে যাওয়া বাবা ছেলে ২০ বছর পর বাবাকে লিভারপুলের হয়ে জয় করা উইসিএল ট্রফি ভাগাভাগি করতে দেখা গেলো। সবাই কথা রাখে না এই কথা আসলে সত্য না, কেউ কেউ তো রাখে! 

 

স্টেডিয়ামের নিস্তব্দ আলো সীমাহীন দূরত্বের এক স্বপ্ন ছোয়ার যন্ত্রনা যে ছেলেটার ছিল; সে আমাদের মাঝমাঠের কান্ডারি হয়ে এক যুগ পেরিয়ে দিলো আবার চলেও গেলো হঠ্যাৎ করে! এই দীর্ঘ সময়ে আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো উপভোগ করেছি তার দারুণ সব ফুটবল রোমান্টিকতা। 

স্টিভির সাথে আপনি ভালো থাকবেন; ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাস্টিক।