• ফুটবল

অ্যান্টনিও রাতিনের বিখ্যাত কামিকাজে কৌশল

পোস্টটি ৪৪৯ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

১৯৬৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই বিতর্কিত বিদায়ের সুবাদে আন্তোনিও উবালদো রাতিন ১৯৬০-এর দশকের শেষের দিকে আর্জেন্টিনার স্নার্লিং এবং অ্যাট্রিশনাল স্টাইলের সর্বজনীন মুখ হিসেবে চিরকাল অমর হয়ে থাকবেন যা কিছুটা অন্যায়।

 

সেই যুগে আর্জেন্টিনা থেকে উঠে আসা নিম্নমানের এবং ভীতি প্রদর্শনকারী মিডফিল্ডারদের মতো গড়পড়তা ছিলেন না রাতিন। দীর্ঘদিন ধরে বোকা জুনিয়র্সের দায়িত্ব পালন করা রাতিন সোনালি-নীল জার্সিধারীদের মূল ভিত্তিও ছিলেন। একজন দুর্দান্তু খেলোয়াড়ের পাশাপাশি তিনি ছিলেন সেই সময়কার আর্জেন্টিনীয় ঐতিহ্যের ক্লাসিক নাম্বার ফাইভ। তিনি একইসাথে একজন শক্তিশালী এবং প্রভাবশালী ডিপ-লায়িং মিডফিল্ডার ছিলেন যিনি প্রতিপক্ষের লাইনগুলো ভেঙে দিতেন এবং ছোট ছোট পাস খেলে বোকার আক্রমণগুলো কিছুটা সংযত রাখার চেষ্টা করতেন।

 

১৯৬৬ সালে ইংরেজদের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালের সেই ম্যাচে প্রতিপক্ষের উপর অতিমাত্রায় আক্রমণাত্মক হওয়ার জন্য নয় বরং রেফারির প্রতি ক্রমাগত প্রতিবাদস্বরূপ রাতিন যে শব্দটি বলেছেন তা বুঝতে না পারার কারণে রেফারি তাকে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেন। এই পুরো দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাটি ইউরোপ এবং দক্ষিণ আমেরিকার মধ্যে ক্রমবর্ধমান সাংস্কৃতিক পার্থক্যের প্রতিফলন ঘটায় যা এই গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ের থেকে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই বিতর্কিত ম্যাচ সকল খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্যে একটি বার্তা দেয় যে ম্যাচের সিচুয়েশন অনুযায়ী কখন কি করা উচিত আর কখন কি করা উচিত নয়।

 

এই প্রতিভাবান ফুটবলার ওয়েম্বলিতে জুলাইয়ের সেই বিকেলে আসলে যতটা দুর্ভাগ্যজনক ছিলেন সেটা এখনকার দিনে এসে বলার অবকাশ রাখে না। পরবর্তীতে অবসর গ্রহণের কয়েক বছর পর তিনি বিখ্যাত এল গ্রাফিকো ম্যাগাজিনে ১৯৬৩ সালের কোপা দে লিবের্তাদোরেসের ফাইনাল সম্পর্কে একটি সাক্ষাৎকার দেন, সেই মৌসুমে তিনি বোকা জুনিয়র্স দলের অধিনায়ক ছিলেন।

 

ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড পাওলো ভ্যালেন্টিমের সঙ্গে খেলা হোসে সানফিলিপ্পোর আক্রমণভাগ বোকা জুনিয়র্সকে সেবছর শক্তিশালী দলে পরিণত করে। তবে ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে ছিল পেলে, লিমা, কৌতিনহো, জিতো, গিলমার, পেপে এবং মেঙ্গালভিওর মতো তারকা। তখনকার সময়ের শক্তিশালী সান্তোষের এই ঝলমলে লাইনআপ দক্ষিণ আমেরিকান চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পাশাপাশি বিশ্ব ক্লাব চ্যাম্পিয়নও ছিল। এই ব্রাজিলিয়ান ক্লাবটির খ্যাতি এমন স্তরে পৌঁছেছিল যে তারা অসম্ভব দক্ষতা এবং বহিরাগত গ্ল্যামারের বৈশ্বিক আইকন হিসাবে রিয়াল মাদ্রিদকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

 

বোকার খেলোয়াড় এবং ম্যানেজমেন্ট মেনেই নিয়েছিল যে ফাইনাল ম্যাচ জয়ের জন্য সন্তোষই ফেভারিট, তবে রাতিন এবং হেডকোচ আরিস্তোবুলো দেমব্রোসি এই ব্যাপারে বেশ দৃঢ়ভাবে দ্বিমত পোষণ করেছিলেন। আর্জেন্টাইন ক্লাবটা যাতে একটু হলেও ম্যাচে এগিয়ে থাকতে পারে তাই নতুন ফর্মেশনে অ্যাডাপ্ট করাটা ছিল কষ্টসাধ্য। দেমব্রোসি তার প্রতিভাবান ফ্রন্ট জুটিকে যতটা সম্ভব খেলায় ইনভলভ রাখতে পুরো ম্যাচ ওপেন খেলতে চেয়েছিলেন, তবে অধিনায়ক রাতিনের মাথায় আরও নিন্দনীয় কিছু ঘুরপাক খাচ্ছিল। দলের সুবিধার জন্য আত্মত্যাগ এবং চরম নির্লজ্জতার সহিত এমন একটি বিবৃতিতে রাতিন ব্যাখ্যা করেছিলেন যে বোকা কীভাবে এইম্যাচে জয় ছিনিয়ে আনতে পারে।

 

তার বিবৃতি ছিল অনেকটা এরকম-

“আমি নিখুঁত কৌশল তৈরি করেছিলাম কিন্তু কোচ মনস্তাত্ত্বিকভাবে তাদের মনোবল ভেঙ্গে দেওয়ার অনুমতি আমাকে দেননি। আমি শুরু থেকেই পেলেকে উত্তেজিত করতে যাচ্ছিলাম এবং ফলস্বরূপ আমরা দুজনেই হয়ত একইসাথে মাঠ থেকে বিদায় নিতাম। বোকা আমাকে খুব একটা মিস করতো না, কিন্তু পেলে ছাড়া সান্তোষ তাদের অর্ধেক খেলাটাও ভালো খেলতো না।”

 

প্রত্যাশা অনুযায়ী ফাইনালে হারলেও বোকা জুনিয়র্স নিজেদের সেরা খেলাটাই উপহার দিয়েছিল। হোসে সানফিলিপ্পো দুই ম্যাচে বোকার হয়ে তিনটি গোলই করেন যা কোচ দেমব্রোসির ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিকে কিছুটা হলেও ন্যায্যতা প্রমাণ করে, কিন্তু পেলের কমান্ডিং পারফরম্যান্সের জেড়ে সান্তোষের পক্ষে ম্যাচ ঘুরে যায়। আমরা কখনই হয়ত হলফ করে বলতে পারব না যে রাতিনের এই কৌশল বোকা জুনিয়র্সের পক্ষে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারত কিনা, তবে অন্তত তার অস্ত্রভান্ডারে নিন্দাবাদের স্তরটি স্বীকৃত হওয়ার যোগ্য। ফুটবলে কামিকাজে কৌশল এমন একটি মাধ্যম যেখানে একজন খেলোয়াড় প্রভাবশালী প্রতিপক্ষকে ব্যাকফুটে ফেলার জন্য নিজেকে আত্মত্যাগ করে যা অবশ্যই এই আধুনিক ফুটবলকে ক্রমশ পুনরুজ্জীবিত করে আসছে।