• ক্রিকেট

ক্রিকেট'দর্শন' : তখন..

পোস্টটি ১১৬১ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

দিনাজপুর জিলা স্কুলে পড়ি তখন।আমাদের স্কুল দুই শিফটের,আমি ছিলাম ডে তে।হোস্টেলে থাকতাম। হোস্টেলে তখন নতুন বিল্ডিং হয়েছে মাত্র,তার পাশ দিয়ে সীমানাপ্রাচীর। এককোণের দেয়ালে একটা খোপের মত আছে,ওপাশে একটা দোকান,চা বিস্কুট থেকে শুরু করে কেরোসিন তেল সবই পাওয়া যেত।দেয়াল টপকে সে দোকানে যেতে হলে খুব একটা স্পাইডারম্যান হতে হয় না।সেটা বড় কথা নয়,কথা হল সেখানে একটা টিভি ছিল।হোস্টেলে তখনও কোন টেলিভিশন নেই,খেলা দেখার জন্য বেকারীর দোকান থেকে শুরু করে নাপিতের দোকান,কত জায়গায় যে ঘুরে বেড়াতে হত।তো সেই দোকানের মালিক আবাদ ভাই,যিনি কথা বলার চেয়ে উচ্চস্বরে হাসেন বেশী।তিনি ক্রিকেট দেখছেন,এমনটা সবসময় হত না।যেদিন দেখতেন,সেদিন আমাদের আর পায় কে!‘ঘরের’ ধারে টিভি থাকলে দূরে কে যায়।সেদিন হয়ত কেরামত ভাইয়ের দোকানে পাঁচ ছয় ঘন্টার স্থায়ী কাস্টমাররা থাকতেন না।কেরামত ভাইয়ের ছিল বেকারী(কনফেকশনারী বলতাম)।তার গল্প আরেকদিন।

সেদিনও আবাদ ভাই খেলা দেখছেন।শ্রীলঙ্কার সাথে আমাদের দ্বিতীয় ওয়ানডে।বগুড়াতে।ডে ম্যাচ।শুরুতেই উইকেট গেছে, ‘আজ মনে হয় চান্স আছে’ টাইপের কথা তখন মনে হতে শুরু করেছে।যারা মর্নিং এ হয়েও তখনও আবাদ ভাইয়ের দোকানে,তাদের কথা বাদই দিলাম,আমাদের মত যাদের তখন স্কুলে যাবার জন্য তৈরী হবার কথা,তারাও তখন সেখানে।নিকুচি করেছে স্কুলের।

খেলাতে মজে গেছি,মাঝে মাঝে হোস্টেল সুপারের ভয় যে হচ্ছেনা,তাও নয়।

কিন্তু ভয়কেও তো জয় করতে হয়।একটু পরে আবাদ ভাইয়ের দোকানের ছোট দরজায় টোকা পড়ল।সেই দেয়ালের খোপ দিয়ে কেউ টোকা দিয়েছেন।গেলাম।ওপাশে হোস্টেল সুপার,যেটা দিয়ে টোকা মেরেছেন,সেটা তার বিখ্যাত বেত।আদেশ হল,সবাই কান ধরে রাস্তা দিয়ে হোস্টেলের মেইন গেটের কাছে যেতে,দেয়াল টপকালে চলবেনা।মানেটা পরিস্কার,কোন মহান ব্যক্তি স্যারের কাছে স্কুল না যাওয়ার ব্যাপারটা লিক করেছেন।সামনে ঘোর অমাবস্যা,কী আর করার!

গেটের কাছে মূর্তিমান দাঁড়িয়ে,এক এক করে আমরা এগিয়ে যাই,আর তিনি পিছন দিকে চিহ্ন বসিয়ে দেন।সাথেই সাথেই দৌড়,যে সেখানেই কাঁইকুঁই করেছে,তার কপালে বেশী জুটেছে।তারপরের নির্দেশ,তখনোই যাতে স্কুলে যাই।ততক্ষনে স্কুলের ফার্স্ট পিরিয়ড শেষ হব হব করছে,গেলে আরেকদফা ক্লাসটিচারের খপ্পরে পড়ব।উপায় নাই,গেলাম।সাথে এক বন্ধু,আমরা একই সেকশনের।স্কুলের কাছে গিয়ে দেখি,ভিতর থেকে শোঁ শোঁ আওয়াজ আসছে শুধু,মানে ক্লাস শুরু হয়ে পুরোদমে চলছে।দুজন মিলে বুদ্ধি বের করলাম,যাবনা,যা আছে কপালে।আরেকবার হোস্টেল সুপারের খপ্পড়ে পড়লে বলব,ক্লাস টিচার দেরী করে গিয়েছি বলে ঢুকতে দেন নাই।

হোস্টেলে ফেরত এলাম।সেখানে আমাদের চেয়ে বেশী সাহসী ব্যক্তিরাও ছিলেন,তারা স্কুলের পথ মাড়াননি,’বেতপর্ব’ শেষ করে সোজা পথ ধরেছেন,চাচার বাড়ির উদ্দেশ্যে।এই চাচা আগে আমাদের বাবুর্চি ছিলেন,খেলতেন আমাদের সাথে।অফস্পিন করতেন,সাথে চাচার ছেলেও খেলতেন।চাচার তখন নতুন চাকরী,তবে আমাদের সাথে সম্পর্ক আছে।সাইকেল নিয়ে দিলাম ছুট।সে বাড়ি তখন হোস্টেলময়,খেলা জমেছে আরও।সাথে চা নাশতাও জুটে গেল,আর কী চাই।

বাংলাদেশ ম্যাচটা জিতেছিল।শ্রীলঙ্কাকে প্রথমবার হারালো বাংলাদেশ।আফতাব আহমেদ হলেন ম্যান অব দা ম্যাচ।পুরস্কার বিতরনীতে এলেন না।অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন বোধহয়।

এখনও মনে পড়ে সেই রোমাঞ্চকর দিনগুলো।টিভি,ইন্টারনেট,খেলার দেখার জন্য এখন কতকিছু।অথচ কী সেই দিনগুলো ছিল তখন।খেলা দেখার সাথে সাথে এর বন্দোবস্ত করারও যে একটা রোমাঞ্চ ছিল!

ভাগ্যিস,সেদিন সেই সাহসটুকু করেছিলাম।নাহলে কী মিস করতাম,ভাবা যায়!আর বেতের বাড়ি?সে তো নস্যি।ম্যাচ জিতেছি,বেতের বাড়ি ‘কী বে’?

জয় দেখতে হলে এরকম কত 'বেত'কে হজম করতে হয়!