গত পঞ্চাশের সেরা পঁচিশ ---- ২৫
পোস্টটি ২৩১৫ বার পঠিত হয়েছে“অগ্নিপুরুষ”
মাসুদ রানার সেই বিখ্যাত বই অগ্নিপুরুষের কথা মনে আছে আপনাদের? সেই যে লুবনা আভান্তিকে মেরে ফেলার পরে ইটালির মাফিয়াদের শিকড় ধরে টান দিলো রানা। এতো বড় একটা সন্ত্রাসী সংগঠনকে একা হাতে ধূলায় মিশিয়ে দিয়েছিলো সে।
ভিভ রিচার্ডসের অগ্নিপুরুষ পড়ার কথা না। তবে যে বই থেকে মাসুদ রানার অ্যাডাপ্টেশন সে বইটা অর্থাৎ এ.জে কুইনেলের ‘ম্যান অন ফায়ার’ পড়ে থাকলেও থাকতে পারেন। নাহলে ১৯৮৬ সালের ১৫ই এপ্রিল তিনি যে কীর্তি করেছিলেন তার আর কোন ব্যাখ্যা যে পাওয়া যায় না।
৮৬’র ফেব্রুয়ারিতে ৫ ম্যাচের এক টেস্ট সিরিজ খেলতে ইংল্যান্ড আসলো ওয়েস্ট ইন্ডিজে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্বর্ণযুগের অনেক খেলোয়াড়ই তখন নেই। রবার্টস নেই, লয়েড নেই। তবে যারা আছেন তাঁরাও কম কিছু না। মার্শাল, গারনার আর হোল্ডিং মিলে যেকোনো দলের নাভিশ্বাস তোলার জন্য যথেষ্ট। স্যার আইজ্যাক ভিভিয়ান আলেকজান্ডার রিচার্ডস তখন উইন্ডিজের অধিনায়ক।
৫ টেস্টের সিরিজের প্রথম ৪ টেস্টে ইংল্যান্ডকে রীতিমত “আড়ং ধোলাই” (আচ্ছা আড়ং ধোলাই জিনিসটা কি?) দিয়ে দেখতে দেখতে ৪-০ করে ফেললো উইন্ডিজ। কিন্তু রিচার্ডস রান পাচ্ছিলেন না। ৪ টেস্টের ৭ ইনিংস ( এক টেস্টে ফলোঅন করেছিলো ইংল্যান্ড) মিলায়ে দুই হাফ সেঞ্চুরিতে তাঁর মোট রান ছিল মাত্র ২২১। রান না পাওয়ার সেই রাগেই কিনা কে জানে ৫ম টেস্টের ২য় ইনিংসে রীতিমত ফুঁসে উঠলেন।
শেষ টেস্টের প্রথম ইনিংসে ডেসমন্ড হেইন্সের সেঞ্চুরি আর ৩ ‘বোলার’ মার্শাল, হার্পার আর হোল্ডিঙের হাফ সেঞ্চুরিতে ৪৭৪ রানের এক বড় সংগ্রহ দাঁড় করায় উইন্ডিজ। জবাবে ইংল্যান্ড স্কোরবোর্ডে জমা করে ৩১০ রান। উইলফ্রেড স্ল্যাক, ডেভিড গাওয়ার আর গ্রাহাম গুচের সাথে হাফ সেঞ্চুরি করেন “মিঃএক্সট্রা।” অবিশ্বাস্য ব্যাপার-স্যাপার। টেস্টে অতিরিক্ত ৫১ রান। তারমধ্যে নোবল থেকেই ৪০। যাই হোক, উইন্ডিজ পায় ১৬৪ রানের লিড।
ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংস শেষ হয় চতুর্থ দিন সকালের দিকে। হাতে সময় ২ দিনেরও কম। সম্ভাব্য রেজাল্ট ড্র। কিন্তু ভিভ চাইলেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রান তুলে ইংল্যান্ডের সামনে বড় একটা টার্গেট দিতে। হেইন্স আর রিচি রিচার্ডসন নেমে ‘কোপা শামসু’ স্টাইলে ব্যাট চালাতে লাগলেন। দলীয় ১০০ রানে আউট হলেন রিচার্ডসন। এরপর মাঠে নামলেন ভিভ। আগের ৪ টেস্টে রান না পাওয়ার যন্ত্রণা, দুঃখ, রাগ সব যেন বের হয়ে আসলো এবার। বলটাকে তিনি মনে করতে লাগলেন “ইতালিয়ান মাফিয়া”। বল যে শুধু একটা মারার জিনিস তা বোঝাতে লাগলেন। বলকে কতোভাবে প্যাভিলিয়নে আছড়ে ফেলা যায় দেখিয়ে দিলেন চোখে আঙুল দিয়ে। ৭ টা বাউন্ডারি আর ৭ ছক্কায় ৩ অঙ্কে পৌঁছালেন লাফিয়ে লাফিয়ে, মাত্র ৫৬ বলে। সেসময়ের তো বটেই, এটা রেকর্ড হয়ে ছিল গত কিছুদিন পর্যন্ত।
উইন্ডিজ ২৪৬ রানে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে। এই রান তাঁরা করেছিলো মাত্র ৪৩ ওভারে। মনে রাখবেন, টি২০’র নাম তখনো কেউ শোনে নি। ওয়ানডে মাত্র চালু হয়েছে। যেখানে ৬০ ওভারে ২৫০-২৭৫ রানই যথেষ্ট মনে করা হতো।
গল্পটা প্রায় শেষ। ২৪৬+১৬৪ = ৪১০ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ইংল্যান্ড অলআউট হলো ১৭০ রানে।
অ্যান্ড হোয়াইটওয়াশ সরি ব্ল্যাকওয়াশ ইজ কমপ্লিটলি অ্যান্ড প্রোপারলি ডান।
প্রথম ইনিংসে হেইন্স করেছিলেন ১৩১, দ্বিতীয় ইনিংসে ৭০। দুই ইনিংস মিলিয়ে রান মোট ২০১।
তাহলে কে হয়েছিলো ম্যান অব দ্য ম্যাচ?
ধুর মশাই।
এটা আবার জিজ্ঞেস করেন?
ভিভ রিচার্ডসের ওরকম পারফরম্যান্সের পরেও হেইন্স ম্যান অব দ্য ম্যাচ পাবে ভাবেন কি করে?
বিঃদ্রঃ একটা মজার ব্যাপার শেয়ার না করে পারছি না। রিচার্ডস তাঁর ইনিংসটি খেলেছিলেন ১৯৮৬’র এপ্রিল মাসে।
আর মাসুদ রানার অগ্নিপুরুষও প্রকাশিত হয় ১৯৮৬ সালের এপ্রিল মাসে।
কাকতালীয় ব্যাপার আর কাকে বলে!!!!!!
- 0 মন্তব্য